An Najahah Shop
EN

আরব মনীষীদের দৃষ্টিতে দারুল উলুম দেওবন্দ

An Najahah Shop

আরব মনীষীদের দৃষ্টিতে দারুল উলুম দেওবন্দ
  • আরব মনীষীদের দৃষ্টিতে দারুল উলুম দেওবন্দ_img_0

আরব মনীষীদের দৃষ্টিতে দারুল উলুম দেওবন্দ

85 BDT160 BDTSave 75 BDT
1

সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। দরুদ ও সালাম সায়্যিদুল মুরসালিনের ওপর, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সকল সাহাবায়ে কেরামের ওপর।
জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া দারুল উলুম দেওবন্দের ব্যাপারে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই! তার বিরুদ্ধে অসত্য ও মিথ্যাচারও কম করা হয়নি! একটা গোষ্ঠী তো এমন রয়েছে, যারা সর্বদা এর ক্ষতি করতে চায়, সম্মান বিনষ্ট করতে চায়! বিশেষ করে তারা দেওবন্দের উলামায়ে কেরাম ও অন্যান্য অঞ্চলের উলামায়ে কেরামের মাঝে; আরো নির্দিষ্ট করে বললে সৌদী আরবের উলামায়ে কেরামের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করতে চায়! অথচ হিন্দুস্তান ও তার বহিরাঞ্চলে গত দেড়শত বছর যাবত দারুল উলুম দেওবন্দ অনবদ্য দ্বীনী খেদমতের আঞ্জাম দিয়ে আসছে। বিশেষত পরবর্তীকালে হিন্দুস্তানে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য মাদ্রাসা ও দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলো যে তারই ধূলিকণায় ধন্য হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেজন্য বন্ধুমহল থেকে বারবার পীড়াপিড়ী করা হচ্ছিলো যেন, আমল ও আকীদার থেকে দেওবন্দের বাস্তব চিত্র উন্মোচন করা হয়।
হিন্দুস্তানের কয়েকজন দ্বীনী আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন শ্রেষ্ঠ আলেমের হাতে ১২৮৩ হিজরী সন মোতাবেক ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে উক্ত প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে গত দেড় শতাব্দীকাল যাবত সে উদ্যমতার সাথে দ্বীনী খেদমতের শীর্ষ চূড়া আরোহন করে আছে। যুগে যুগে সমসাময়িক বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ের ক্ষেত্রে দেওবন্দ যা হক ও সঠিক মনে করেছে সেটাই ব্যক্ত করেছে। চাই এতে করে কেউ সন্তুষ্ট হোক, কিংবা ক্রদ্ধ হোক! আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দা সে গায়ে মাখেনি।
বস্তুত এটি এমন একটি আন্দোলন যা হিন্দুস্তানে বসবাসরত মুসলামলদের শিক্ষা-দীক্ষা, সামাজিকতা এবং দ্বীনী ও চিন্তাগত উৎকর্ষ সাধনে বদ্ধপরিকর হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অত্র অঞ্চলে মুসলমানদের ইসলামী পরিচয়-পরিচিতি ও দ্বীনদারিতে দেওবন্দের ছাপ স্পষ্ট। এখানকার মুসলিম জনসাধারণ তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহে তাদের কাছেই ধর্না দেয়।
আমাদের এ ভূমিতে বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদের, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গির এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির মাঝে চিরন্তর লড়াই ও দ্বন্দ চলে আসছে। সাথে আছে দলীয় গোড়ামী, রাজনৈতিক খুনাখুনি এবং বিভিন্ন দলীয় জোট ও গোষ্ঠী। এসব কিছুর মাঝে থেকে দেওবন্দ থেকে যারা পড়ালেখা শেষ করেছে, কিংবা সেখানকার ছাত্রদের কাছে যারা পড়ালেখা করেছে, তারাই এ অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে উম্মাহর নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করেছে।
এ কথাগুলো লেখার কোনো ইচ্ছা আমাদের ছিলো না। কিন্তু আমাদের পাক-ভারত উপমহাদেশের কিছু মুসলমানকে তাদের প্রবৃত্তি প্ররোচীত করেছে। সেজন্য তারা দেওবন্দের বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি ও অপবাদ আরোপ করতে উঠেপড়ে লেগেছে! শুধু বিরোধীতা নয়; ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমতে তার ত্যাগ-তিতিক্ষার কথাকেও অস্বীকার করছে! বিশেষত সৌদী আরবের উলামা-মাশায়েখের কাছে দেওবন্দের সুনাম-সুখ্যাতি ক্ষুন্ন করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে! এমতাবস্থায় এ কথাগুলো লেখা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় ছিলো না!
তারা উলামায়ে দেওবন্দের বিভিন্ন উর্দূ উদ্ধৃতিকে বর্ণনাপ্রসঙ্গ থেকে সরিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে উল্লেখ করার মাধ্যমে (অর্থাৎ, উদ্ধৃতির পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অংশকে ধারাবাহিক উল্লেখ না করে) আরবীতে রুপান্তরিত করে, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা মূল উদ্ধৃতিকে আরবীতে রূপান্তরিত করতে ভুল করে। এরপর আবার কূটকুশীলতার সাথে পক্ষপাতমূলক প্রচারণা চালিয়ে তারা আরব উলামা-মাশায়েখদেরকে মর্যাদার উচ্চাসনে সমাসীন করে! (ভাবটা এমন, যেন তারা তাদের ঘনিষ্ট বন্ধু!)
তো আমাদের এই লেখাটির একমাত্র উদ্দেশ্য জামিয়ার আকীদা ও আমলের প্রকৃত রূপ স্পষ্ট করে দেয়া এবং কিছু কিছু মানুষের অন্তরে তার ব্যাপারে যে "শুবহাত" ও সন্দেহ দানা বেঁধেছে তা নিরসন করে দেয়া। এখানে বিশেষ কোনো জামাতের সমালোচনা করা কিংবা তাদেরকে খোঁচা মেরে কথা বলার কোনো উদ্দেশ্যই আমাদের নেই। কেননা জামিয়া এ সকল অনর্থক কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চায়; বিশেষত এমন কাজ থেকে যা উম্মাহর মাঝে কেবল দলাদলি ও ফের্কাবাজিই সৃষ্টি করে ।
আর এই প্রচেষ্টার দ্বারা আরব ধনকুবেরদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য-সহযোগিতার প্রত্যাশা করাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়! কেননা আমাদের প্রতিষ্ঠানটি অর্থনৈতিক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে মুসলিম জনসাধারণের স্বেচ্ছা প্রণোদিত দানকেই কেবল গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে তারা ধনাঢ্য ও অধিক উপার্জনকারী ব্যক্তিদের দানের চেয়ে গরীব ও স্বল্প আয়ের লোকদের দানকে বেশি পছন্দ করে। কেননা দরিদ্র ব্যক্তি; তার ঘামে ভেজা হাতের কষ্টার্জিত শ্রমের উপার্জনে অনেক অনেক নূর ও বরকত থাকে এমন ধনী ব্যক্তির দানের চেয়ে, যার দানের মাঝে থাকে লোক দেখানো মনোভাব কিংবা সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন। পাশাপাশি সকল প্রকারের সরকারী অনুদান থেকে জামিয়া নিজেকে পরহেজ রেখেছে যেন তার নিয়ম-শৃঙ্খলা, মানহাজ ও কর্মপদ্ধতি এবং তার মতামত ও ফতোয়ার মাঝে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ তারা না করতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের এ প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য হলো, সৌদী আরবের যে সমস্ত বড় বড় উলামায়ে কেরাম জামিয়া সফর করেছেন এবং জামিয়ার প্রতি তাদের হৃদয়ের কিছু অনুভূতির কথা জানিয়েছেন তার উজ্জ্বল একটি দিক আরবীভাষী পাঠকদের সামনে তুলে ধরা
চিন্তাশীল বিদগ্ধ বড় বড় উলামায়ে কেরাম জামিয়ার প্রতিটি কাজে ইখলাস ও উপযোগিতা প্রত্যক্ষ করে এবং ইলম ও আদব-শিষ্টাচারের প্রতি এর আগ্রহ ও উদ্দীপনা দেখতে পেয়ে যা লিখে গেছেন এবং তাদের মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেমিনার-অনুষ্ঠানে তাঁরা
১ আর আমাদের এ অনুবাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলাভাষী পাঠকদের সামনে তাদের অভিব্যক্তিগুলোকে তুলে ধরা।
যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এটি তার সামান্য নমুনা মাত্র। অন্যথায় প্রতিদিনই শিক্ষা-দীক্ষা, দাওয়াহ ও ইরশাদের সাথে সম্পৃক্ত জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তি, সাংবাদিক কিংবা রাজনীতিবিদ প্রভূত শ্রেণীর বিভিন্ন ব্যক্তির আগমন ঘটে এখানে।
যাই হোক। আমরা এ অভিব্যক্তিগুলোকে তাদের সফরের তারিখের ক্রমানুসারে সাজিয়েছি। সেজন্য যাদের কথাগুলো এখানে আনা হয়েছে তাদের অনেকের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা পার্থক্য করে এই ধারাবাহিকতাকে ক্ষুন্ন করা হয়নি।
পরিশেষে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করছি যেন তিনি জামিয়ার এ প্রচেষ্টাকে কবুল করে নেন এবং আমাদেরকে আরো বেশি যথার্থ ও উপযোগী খেদমত করার তাওফীক দান করেন; যাতে রয়েছে দেশ ও দশের কল্যাণ। আর তা আল্লাহ তায়ালার কাছে কঠিন কোনো বিষয় নয়।
বিনীত নিবেদক
আবুল কাসেম নোমানী মুহতামিম, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত
i