An Najahah Shop
EN

বরেণ্যদের স্মৃতিচারণ

An Najahah Shop

বরেণ্যদের স্মৃতিচারণ
  • বরেণ্যদের স্মৃতিচারণ_img_0

বরেণ্যদের স্মৃতিচারণ

340 BDT680 BDTSave 340 BDT
1

বইয়ের গল্প : বরেণ্যদের স্মৃতিচারণ

হযরতের মজলিস। এক গ্রাম্য লোক দুটি তরমুজ নিয়ে হাজির হলো। হযরত বললেন, 'ভাই তরমুজ দুটি কেন?'
—'আপনার বউ না দুইটা।'
—হ্যাঁ, তা তো বটে।'
—'আপনার এক বউয়ের জন্য একটা, আরেক বউয়ের জন্য আরেকটা।'
হযরত বললেন, 'আমি কীভাবে বুঝব, দুটার ওজন সমান না কমবেশি আছে?'
লোকটি বলল, 'আমি দুটিকে ওজন করে এনেছি, দুটোই সমান।'
হযরত আবার বললেন, 'কিন্তু কী করে বুঝব, কোনটার স্বাদ মিষ্টি আর কোনটার বিস্বাদ?'
এবার লোকটি বলল, 'আমি তো তরমুজের ভেতর ঢুকে দেখিনি যে কোনটার স্বাদ মিষ্টি আর কোনটার স্বাদ পানসা বলতে পারব!'
অবশেষে হযরত তরমুজ দুটিকে দুইভাগ করে একটির অর্ধেক অপরটির অর্ধেকের সাথে একত্রিত করে দুই সংসারে পাঠিয়ে দিলেন।
ঘটনাটি দেখে গ্রাম্য লোকটি বলল, 'মৌলভীজি, আপনি খুব কষ্টে আছেন।'
হযরত বললেন, 'ভাই, এখানকার কষ্ট সহ্য করে নিতে রাজি আছি, কিন্তু পরকালের কষ্ট সহ্য করতে রাজি নই।

হযরত যখন দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তখন প্রথম স্ত্রী বলেছিলেন, 'আপনি তো আপনার শিষ্য মুরিদদের জন্য দ্বিতীয় বিবাহের দরজা খুলে দিয়েছেন।'
হযরত বলেছিলেন, 'আমি দ্বিতীয় বিবাহের দরজা খুলিনি বরং তা বন্ধ করে দিয়েছি। মানুষ যখন দেখবে একটির জায়গায় দুটি বিয়ে করলে এত হিসেব করে চলতে হয়, এত বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হয়, তখন কেউ দ্বিতীয় বিবাহের নামও উচ্চারণ করবে না।'

হযরত তাঁর ভাগ্নের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীকে দ্বিতীয় বিবাহ করেছিলেন। হযরত কী কারণে এই বিবাহটি করেছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ তিনি 'আল খুতুবুল মুযীবাহ লিলকুলুবিল মুযীবাহ' নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

হযরত জীবনভর দুই স্ত্রীর প্রতি পরিপূর্ণ সমতা ও সুবিচার রক্ষা করার চেষ্টা করে গেছেন।
একবার হযরত এমনও বলেছিলেন, আমি তো একজনের পালায় অপরজনের কল্পনা করাও সমতা-সুবিচারের পরিপন্থী মনে করি। কারণ, এতে যার পালা সেই স্ত্রীর প্রতি মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেবে। আর এটি হক বিনষ্ট করার শামিল। এভাবে আমি আমার কাপড় চোপড় খানকাতেই রাখি। কারণ, এগুলো যদি একজনের ঘরে রাখি, অন্যজন আপত্তি তুলতে পারে, আমার সঙ্গে অতটা ঘনিষ্ঠতা নেই অন্যজনের সঙ্গে যতটা ঘনিষ্ঠতা আছে।'

এই হযরত হলেন আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.। এরকমই ছিল বুযুর্গদের দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে সতর্কতা। কোথায় জানি পড়েছিলাম 'যার যার বুঝ, তার তার নাকি তরমুজ'। তাই হয়তো দুই, তিন, চার, কারো জন্য শুনতে খুবই মজার, আর কারো কারো জন্য ব্যাপারটি মহাপরীক্ষার।

লেখাটি চোখে পড়লো একজনের কল্যাণে। এই বছর যখন দেশে গেলাম আব্বার লাইব্রেরি ঘাটছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো তাকি উসমানী দা.বা. সাহেবের 'নুকুশে রফতেগাঁ' নামে একটি কিতাব। নামের সঠিক অর্থটা কী হবে আব্বাকে জিজ্ঞেস করলে বইটি সম্পর্কে আব্বা বলে দিলেন। ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে আব্বাকে আর বিরক্ত না করার জন্য যথাস্থানে রেখে চলে এলাম। তারপর আর বইটির কথা মনে ছিল না। দুদিন আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউল হক রহ. সম্পর্কে জানার জন্য একজন পরামর্শ দিলেন এই বইটি পড়ার জন্য। বাংলা অনুবাদ : বরেণ্যদের স্মৃতিচারণ। অনুবাদ করেছেন : মাওলানা মুহাম্মাদ মুহিউদ্দীন হাফি.।

পড়তে শুরু করেছি। এরকম বই আমি ধারাবাহিকভাবে না পড়ে সূচি পছন্দ করে করে পড়ি। খুব ভালো লাগছে। আসলেই চমৎকার বই। বইটি পড়ছি আর মুফতি হযরতের আব্বাজি রহ. যেমন বলতেন, তেমন আমিও দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবছি—

'একটি আসর ছিল ফেরেশতাদের যেটি সমাপ্ত হয়ে গেছে।'

© মাজিদা রিফা