উসমানি সাম্রাজ্যের অজানা অধ্যায়
বই : উসমানি সাম্রাজ্যের অজানা অধ্যায়লেখক : ড. মুস্তফা আরমাগানভাষান্তর : সাঈদুল মুস্তফাপ্রকাশনা : মুহাম্মদ পাবলিকেশনকুস্তিগির সুলতান প্রথম মুহাম্মদ (চিলবি)মুহাম্মদ চিলবির অবদান ও সাফল্য তাঁর নাতি সুলতান সেলিম আল-ক্বাতি’ (ইয়াউজ) কিংবা তাঁর মিতা দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল-ফাতিহর কীর্তির সামনে অনেকটা মলিন। কিন্তু প্রকৃত মূল্যায়নে তাঁর কৃতিত্ব বড় পরিসরে কোনো আলো না ছড়ালে তা কোনো অংশেই কম গুরুত্ববহ নয়।তৈমুর লঙের বিভীষিকাময় যুগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পর উসমানি রাষ্ট্র বুনিয়াদের দ্বিতীয় স্থপতি হিসেবে স্মরণ করা হয় মুহাম্মদ চিলবিকে। ইতিহাস তাঁকে পেটানো গড়নের বলে বর্ণনা করেছে। ধূসর শ্মশ্রু, গোলাকার মুখাবয়ব, প্রশস্ত বুক যেন নির্ভয়ের প্রতীক।তাঁর দৃষ্টিশক্তি ছিল চিলের মতো তীক্ষ্ণ, তিনি ছিলেন সিংহের মতো শক্তিশালী।পিতার মতোই তাঁর শিকারের নেশা ছিল। এই নেশাই তাঁর জন্যে কাল হয়েছিল। আদির্নাতে এক শিকার অভিযান প্রাক্কালে বন্য শূকর তাড়াতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান, পরবর্তীতে মারা যান। যুদ্ধনথিতে রেকর্ড আছে তিনি চব্বিশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর শরিরে চল্লিশটি আঘাত ছিল। (উসমানি রাজপরিবারের প্রথম প্রজন্মের সুলতানদের শারীরিক আঘাত ছোটোখাটো কিছু ছিল না, কারণ তারা শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে রণক্ষেত্রের কেন্দ্রে প্রবেশ করত। উদাহরণত, রণক্ষেত্রে লড়তে গিয়ে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ চোখ হারান। তেমনি সুলতান আল-ফাতিহ বেলগ্রেডের যুদ্ধে হাঁটু কিংবা উরুতে প্রচণ্ড আঘাত পান)।চিলবি ছিলেন উসমানীয় শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী। তিনি আমাসিয়া ও মারযিফনের গভর্নর থাকাকালীন এ দুই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ ঘোড়সওয়ারী নিয়ে দুইটি দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দুই দলকেই আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করতেন। বিভিন্ন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় উভয় দল অংশগ্রহণ করত। রাজপ্রাসাদেও তাদের অনেক ভক্ত ছিল। সময়ের সাথে সাথে এই দুইটি দল দুইটি বিখ্যাত ক্রীড়া সংগঠনে রূপ নেয়। মারযিফনবাসী তাঁদের সংগঠনের প্রতীক হিসেবে বেছে নেয় ‘মোড়ানো পাতা’। অন্যদিকে আমাসিয়াবাসীর প্রতীক ছিল ‘ঢেড়শ’। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই দুই ঘোড়দৌড় সংগঠনের আন্ত-প্রতিযোগিতা অব্যাহত ছিল। এমনকি মুহাম্মদ চিলবির উদ্যোগে নির্মিত রাস্তা যা এখন ইস্তাম্বুলের চেঙ্গেলকোয়ী উপজেলায় অবস্থিত, ওই রাস্তার মাথায় এখনও সেই দুই ক্রীড়া সংগঠনের চিরবৈরিতার স্মৃতিফলক সাঁটানো আছে, কোনো এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ের পর মর্মর পাথরে তৈরি ফলকটি সেই পথের ধারে লাগানো হয়েছিল।ইতিহাসবিদিত যে, সুলতান মুহাম্মদ চিলবির ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল। বিখ্যাত আরব পদব্রজক ইবনে আরবশাহ তাঁর শাসনামলে আদির্না পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সুলতানের উপকার ও চমৎকার ব্যবহারে তিনি সিক্ত হয়েছিলেন। আদির্নাতে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে ইবনে আরবশাহ প্রচুর অনুবাদের কাজে স্বাক্ষর রেখেছেন। এমনকি তিনি রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। সুলতান তাঁকে ব্যক্তিগত লেখক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সুলতানের মৃত্যুর পর ইবনে আরবশাহ পুনরায় কায়রোতে ফিরে আসেন। প্রাসাদে থাকাকালীন তাঁর অনূদিত ‘তাফসিরে আবিল লাইস সমরকন্দি’ পরবর্তীতে তিনি মুহাম্মদ চিলবির নামে উৎসর্গ করেন।.
An Najahah Shop
Category List
All products

বই : উসমানি সাম্রাজ্যের অজানা অধ্যায়
লেখক : ড. মুস্তফা আরমাগান
ভাষান্তর : সাঈদুল মুস্তফা
প্রকাশনা : মুহাম্মদ পাবলিকেশন
কুস্তিগির সুলতান প্রথম মুহাম্মদ (চিলবি)
মুহাম্মদ চিলবির অবদান ও সাফল্য তাঁর নাতি সুলতান সেলিম আল-ক্বাতি’ (ইয়াউজ) কিংবা তাঁর মিতা দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল-ফাতিহর কীর্তির সামনে অনেকটা মলিন। কিন্তু প্রকৃত মূল্যায়নে তাঁর কৃতিত্ব বড় পরিসরে কোনো আলো না ছড়ালে তা কোনো অংশেই কম গুরুত্ববহ নয়।
তৈমুর লঙের বিভীষিকাময় যুগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পর উসমানি রাষ্ট্র বুনিয়াদের দ্বিতীয় স্থপতি হিসেবে স্মরণ করা হয় মুহাম্মদ চিলবিকে। ইতিহাস তাঁকে পেটানো গড়নের বলে বর্ণনা করেছে। ধূসর শ্মশ্রু, গোলাকার মুখাবয়ব, প্রশস্ত বুক যেন নির্ভয়ের প্রতীক।তাঁর দৃষ্টিশক্তি ছিল চিলের মতো তীক্ষ্ণ, তিনি ছিলেন সিংহের মতো শক্তিশালী।
পিতার মতোই তাঁর শিকারের নেশা ছিল। এই নেশাই তাঁর জন্যে কাল হয়েছিল। আদির্নাতে এক শিকার অভিযান প্রাক্কালে বন্য শূকর তাড়াতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান, পরবর্তীতে মারা যান। যুদ্ধনথিতে রেকর্ড আছে তিনি চব্বিশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর শরিরে চল্লিশটি আঘাত ছিল। (উসমানি রাজপরিবারের প্রথম প্রজন্মের সুলতানদের শারীরিক আঘাত ছোটোখাটো কিছু ছিল না, কারণ তারা শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে রণক্ষেত্রের কেন্দ্রে প্রবেশ করত। উদাহরণত, রণক্ষেত্রে লড়তে গিয়ে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ চোখ হারান। তেমনি সুলতান আল-ফাতিহ বেলগ্রেডের যুদ্ধে হাঁটু কিংবা উরুতে প্রচণ্ড আঘাত পান)।
চিলবি ছিলেন উসমানীয় শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী। তিনি আমাসিয়া ও মারযিফনের গভর্নর থাকাকালীন এ দুই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ ঘোড়সওয়ারী নিয়ে দুইটি দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দুই দলকেই আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করতেন। বিভিন্ন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় উভয় দল অংশগ্রহণ করত। রাজপ্রাসাদেও তাদের অনেক ভক্ত ছিল। সময়ের সাথে সাথে এই দুইটি দল দুইটি বিখ্যাত ক্রীড়া সংগঠনে রূপ নেয়। মারযিফনবাসী তাঁদের সংগঠনের প্রতীক হিসেবে বেছে নেয় ‘মোড়ানো পাতা’। অন্যদিকে আমাসিয়াবাসীর প্রতীক ছিল ‘ঢেড়শ’। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই দুই ঘোড়দৌড় সংগঠনের আন্ত-প্রতিযোগিতা অব্যাহত ছিল। এমনকি মুহাম্মদ চিলবির উদ্যোগে নির্মিত রাস্তা যা এখন ইস্তাম্বুলের চেঙ্গেলকোয়ী উপজেলায় অবস্থিত, ওই রাস্তার মাথায় এখনও সেই দুই ক্রীড়া সংগঠনের চিরবৈরিতার স্মৃতিফলক সাঁটানো আছে, কোনো এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ের পর মর্মর পাথরে তৈরি ফলকটি সেই পথের ধারে লাগানো হয়েছিল।
ইতিহাসবিদিত যে, সুলতান মুহাম্মদ চিলবির ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল। বিখ্যাত আরব পদব্রজক ইবনে আরবশাহ তাঁর শাসনামলে আদির্না পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সুলতানের উপকার ও চমৎকার ব্যবহারে তিনি সিক্ত হয়েছিলেন। আদির্নাতে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে ইবনে আরবশাহ প্রচুর অনুবাদের কাজে স্বাক্ষর রেখেছেন। এমনকি তিনি রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। সুলতান তাঁকে ব্যক্তিগত লেখক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সুলতানের মৃত্যুর পর ইবনে আরবশাহ পুনরায় কায়রোতে ফিরে আসেন। প্রাসাদে থাকাকালীন তাঁর অনূদিত ‘তাফসিরে আবিল লাইস সমরকন্দি’ পরবর্তীতে তিনি মুহাম্মদ চিলবির নামে উৎসর্গ করেন।
.
লেখক : ড. মুস্তফা আরমাগান
ভাষান্তর : সাঈদুল মুস্তফা
প্রকাশনা : মুহাম্মদ পাবলিকেশন
কুস্তিগির সুলতান প্রথম মুহাম্মদ (চিলবি)
মুহাম্মদ চিলবির অবদান ও সাফল্য তাঁর নাতি সুলতান সেলিম আল-ক্বাতি’ (ইয়াউজ) কিংবা তাঁর মিতা দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল-ফাতিহর কীর্তির সামনে অনেকটা মলিন। কিন্তু প্রকৃত মূল্যায়নে তাঁর কৃতিত্ব বড় পরিসরে কোনো আলো না ছড়ালে তা কোনো অংশেই কম গুরুত্ববহ নয়।
তৈমুর লঙের বিভীষিকাময় যুগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পর উসমানি রাষ্ট্র বুনিয়াদের দ্বিতীয় স্থপতি হিসেবে স্মরণ করা হয় মুহাম্মদ চিলবিকে। ইতিহাস তাঁকে পেটানো গড়নের বলে বর্ণনা করেছে। ধূসর শ্মশ্রু, গোলাকার মুখাবয়ব, প্রশস্ত বুক যেন নির্ভয়ের প্রতীক।তাঁর দৃষ্টিশক্তি ছিল চিলের মতো তীক্ষ্ণ, তিনি ছিলেন সিংহের মতো শক্তিশালী।
পিতার মতোই তাঁর শিকারের নেশা ছিল। এই নেশাই তাঁর জন্যে কাল হয়েছিল। আদির্নাতে এক শিকার অভিযান প্রাক্কালে বন্য শূকর তাড়াতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান, পরবর্তীতে মারা যান। যুদ্ধনথিতে রেকর্ড আছে তিনি চব্বিশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর শরিরে চল্লিশটি আঘাত ছিল। (উসমানি রাজপরিবারের প্রথম প্রজন্মের সুলতানদের শারীরিক আঘাত ছোটোখাটো কিছু ছিল না, কারণ তারা শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে রণক্ষেত্রের কেন্দ্রে প্রবেশ করত। উদাহরণত, রণক্ষেত্রে লড়তে গিয়ে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ চোখ হারান। তেমনি সুলতান আল-ফাতিহ বেলগ্রেডের যুদ্ধে হাঁটু কিংবা উরুতে প্রচণ্ড আঘাত পান)।
চিলবি ছিলেন উসমানীয় শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী। তিনি আমাসিয়া ও মারযিফনের গভর্নর থাকাকালীন এ দুই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ ঘোড়সওয়ারী নিয়ে দুইটি দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দুই দলকেই আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করতেন। বিভিন্ন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় উভয় দল অংশগ্রহণ করত। রাজপ্রাসাদেও তাদের অনেক ভক্ত ছিল। সময়ের সাথে সাথে এই দুইটি দল দুইটি বিখ্যাত ক্রীড়া সংগঠনে রূপ নেয়। মারযিফনবাসী তাঁদের সংগঠনের প্রতীক হিসেবে বেছে নেয় ‘মোড়ানো পাতা’। অন্যদিকে আমাসিয়াবাসীর প্রতীক ছিল ‘ঢেড়শ’। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই দুই ঘোড়দৌড় সংগঠনের আন্ত-প্রতিযোগিতা অব্যাহত ছিল। এমনকি মুহাম্মদ চিলবির উদ্যোগে নির্মিত রাস্তা যা এখন ইস্তাম্বুলের চেঙ্গেলকোয়ী উপজেলায় অবস্থিত, ওই রাস্তার মাথায় এখনও সেই দুই ক্রীড়া সংগঠনের চিরবৈরিতার স্মৃতিফলক সাঁটানো আছে, কোনো এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ের পর মর্মর পাথরে তৈরি ফলকটি সেই পথের ধারে লাগানো হয়েছিল।
ইতিহাসবিদিত যে, সুলতান মুহাম্মদ চিলবির ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল। বিখ্যাত আরব পদব্রজক ইবনে আরবশাহ তাঁর শাসনামলে আদির্না পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সুলতানের উপকার ও চমৎকার ব্যবহারে তিনি সিক্ত হয়েছিলেন। আদির্নাতে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে ইবনে আরবশাহ প্রচুর অনুবাদের কাজে স্বাক্ষর রেখেছেন। এমনকি তিনি রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। সুলতান তাঁকে ব্যক্তিগত লেখক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সুলতানের মৃত্যুর পর ইবনে আরবশাহ পুনরায় কায়রোতে ফিরে আসেন। প্রাসাদে থাকাকালীন তাঁর অনূদিত ‘তাফসিরে আবিল লাইস সমরকন্দি’ পরবর্তীতে তিনি মুহাম্মদ চিলবির নামে উৎসর্গ করেন।
.
উসমানি সাম্রাজ্যের অজানা অধ্যায়
225 BDT300 BDTSave 75 BDT
1
বই : উসমানি সাম্রাজ্যের অজানা অধ্যায়
লেখক : ড. মুস্তফা আরমাগান
ভাষান্তর : সাঈদুল মুস্তফা
প্রকাশনা : মুহাম্মদ পাবলিকেশন
কুস্তিগির সুলতান প্রথম মুহাম্মদ (চিলবি)
মুহাম্মদ চিলবির অবদান ও সাফল্য তাঁর নাতি সুলতান সেলিম আল-ক্বাতি’ (ইয়াউজ) কিংবা তাঁর মিতা দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল-ফাতিহর কীর্তির সামনে অনেকটা মলিন। কিন্তু প্রকৃত মূল্যায়নে তাঁর কৃতিত্ব বড় পরিসরে কোনো আলো না ছড়ালে তা কোনো অংশেই কম গুরুত্ববহ নয়।
তৈমুর লঙের বিভীষিকাময় যুগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পর উসমানি রাষ্ট্র বুনিয়াদের দ্বিতীয় স্থপতি হিসেবে স্মরণ করা হয় মুহাম্মদ চিলবিকে। ইতিহাস তাঁকে পেটানো গড়নের বলে বর্ণনা করেছে। ধূসর শ্মশ্রু, গোলাকার মুখাবয়ব, প্রশস্ত বুক যেন নির্ভয়ের প্রতীক।তাঁর দৃষ্টিশক্তি ছিল চিলের মতো তীক্ষ্ণ, তিনি ছিলেন সিংহের মতো শক্তিশালী।
পিতার মতোই তাঁর শিকারের নেশা ছিল। এই নেশাই তাঁর জন্যে কাল হয়েছিল। আদির্নাতে এক শিকার অভিযান প্রাক্কালে বন্য শূকর তাড়াতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান, পরবর্তীতে মারা যান। যুদ্ধনথিতে রেকর্ড আছে তিনি চব্বিশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর শরিরে চল্লিশটি আঘাত ছিল। (উসমানি রাজপরিবারের প্রথম প্রজন্মের সুলতানদের শারীরিক আঘাত ছোটোখাটো কিছু ছিল না, কারণ তারা শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে রণক্ষেত্রের কেন্দ্রে প্রবেশ করত। উদাহরণত, রণক্ষেত্রে লড়তে গিয়ে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ চোখ হারান। তেমনি সুলতান আল-ফাতিহ বেলগ্রেডের যুদ্ধে হাঁটু কিংবা উরুতে প্রচণ্ড আঘাত পান)।
চিলবি ছিলেন উসমানীয় শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী। তিনি আমাসিয়া ও মারযিফনের গভর্নর থাকাকালীন এ দুই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ ঘোড়সওয়ারী নিয়ে দুইটি দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দুই দলকেই আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করতেন। বিভিন্ন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় উভয় দল অংশগ্রহণ করত। রাজপ্রাসাদেও তাদের অনেক ভক্ত ছিল। সময়ের সাথে সাথে এই দুইটি দল দুইটি বিখ্যাত ক্রীড়া সংগঠনে রূপ নেয়। মারযিফনবাসী তাঁদের সংগঠনের প্রতীক হিসেবে বেছে নেয় ‘মোড়ানো পাতা’। অন্যদিকে আমাসিয়াবাসীর প্রতীক ছিল ‘ঢেড়শ’। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই দুই ঘোড়দৌড় সংগঠনের আন্ত-প্রতিযোগিতা অব্যাহত ছিল। এমনকি মুহাম্মদ চিলবির উদ্যোগে নির্মিত রাস্তা যা এখন ইস্তাম্বুলের চেঙ্গেলকোয়ী উপজেলায় অবস্থিত, ওই রাস্তার মাথায় এখনও সেই দুই ক্রীড়া সংগঠনের চিরবৈরিতার স্মৃতিফলক সাঁটানো আছে, কোনো এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ের পর মর্মর পাথরে তৈরি ফলকটি সেই পথের ধারে লাগানো হয়েছিল।
ইতিহাসবিদিত যে, সুলতান মুহাম্মদ চিলবির ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল। বিখ্যাত আরব পদব্রজক ইবনে আরবশাহ তাঁর শাসনামলে আদির্না পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সুলতানের উপকার ও চমৎকার ব্যবহারে তিনি সিক্ত হয়েছিলেন। আদির্নাতে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে ইবনে আরবশাহ প্রচুর অনুবাদের কাজে স্বাক্ষর রেখেছেন। এমনকি তিনি রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। সুলতান তাঁকে ব্যক্তিগত লেখক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সুলতানের মৃত্যুর পর ইবনে আরবশাহ পুনরায় কায়রোতে ফিরে আসেন। প্রাসাদে থাকাকালীন তাঁর অনূদিত ‘তাফসিরে আবিল লাইস সমরকন্দি’ পরবর্তীতে তিনি মুহাম্মদ চিলবির নামে উৎসর্গ করেন।
.
লেখক : ড. মুস্তফা আরমাগান
ভাষান্তর : সাঈদুল মুস্তফা
প্রকাশনা : মুহাম্মদ পাবলিকেশন
কুস্তিগির সুলতান প্রথম মুহাম্মদ (চিলবি)
মুহাম্মদ চিলবির অবদান ও সাফল্য তাঁর নাতি সুলতান সেলিম আল-ক্বাতি’ (ইয়াউজ) কিংবা তাঁর মিতা দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল-ফাতিহর কীর্তির সামনে অনেকটা মলিন। কিন্তু প্রকৃত মূল্যায়নে তাঁর কৃতিত্ব বড় পরিসরে কোনো আলো না ছড়ালে তা কোনো অংশেই কম গুরুত্ববহ নয়।
তৈমুর লঙের বিভীষিকাময় যুগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পর উসমানি রাষ্ট্র বুনিয়াদের দ্বিতীয় স্থপতি হিসেবে স্মরণ করা হয় মুহাম্মদ চিলবিকে। ইতিহাস তাঁকে পেটানো গড়নের বলে বর্ণনা করেছে। ধূসর শ্মশ্রু, গোলাকার মুখাবয়ব, প্রশস্ত বুক যেন নির্ভয়ের প্রতীক।তাঁর দৃষ্টিশক্তি ছিল চিলের মতো তীক্ষ্ণ, তিনি ছিলেন সিংহের মতো শক্তিশালী।
পিতার মতোই তাঁর শিকারের নেশা ছিল। এই নেশাই তাঁর জন্যে কাল হয়েছিল। আদির্নাতে এক শিকার অভিযান প্রাক্কালে বন্য শূকর তাড়াতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান, পরবর্তীতে মারা যান। যুদ্ধনথিতে রেকর্ড আছে তিনি চব্বিশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর শরিরে চল্লিশটি আঘাত ছিল। (উসমানি রাজপরিবারের প্রথম প্রজন্মের সুলতানদের শারীরিক আঘাত ছোটোখাটো কিছু ছিল না, কারণ তারা শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে রণক্ষেত্রের কেন্দ্রে প্রবেশ করত। উদাহরণত, রণক্ষেত্রে লড়তে গিয়ে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ চোখ হারান। তেমনি সুলতান আল-ফাতিহ বেলগ্রেডের যুদ্ধে হাঁটু কিংবা উরুতে প্রচণ্ড আঘাত পান)।
চিলবি ছিলেন উসমানীয় শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী। তিনি আমাসিয়া ও মারযিফনের গভর্নর থাকাকালীন এ দুই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ ঘোড়সওয়ারী নিয়ে দুইটি দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দুই দলকেই আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করতেন। বিভিন্ন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় উভয় দল অংশগ্রহণ করত। রাজপ্রাসাদেও তাদের অনেক ভক্ত ছিল। সময়ের সাথে সাথে এই দুইটি দল দুইটি বিখ্যাত ক্রীড়া সংগঠনে রূপ নেয়। মারযিফনবাসী তাঁদের সংগঠনের প্রতীক হিসেবে বেছে নেয় ‘মোড়ানো পাতা’। অন্যদিকে আমাসিয়াবাসীর প্রতীক ছিল ‘ঢেড়শ’। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই দুই ঘোড়দৌড় সংগঠনের আন্ত-প্রতিযোগিতা অব্যাহত ছিল। এমনকি মুহাম্মদ চিলবির উদ্যোগে নির্মিত রাস্তা যা এখন ইস্তাম্বুলের চেঙ্গেলকোয়ী উপজেলায় অবস্থিত, ওই রাস্তার মাথায় এখনও সেই দুই ক্রীড়া সংগঠনের চিরবৈরিতার স্মৃতিফলক সাঁটানো আছে, কোনো এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ের পর মর্মর পাথরে তৈরি ফলকটি সেই পথের ধারে লাগানো হয়েছিল।
ইতিহাসবিদিত যে, সুলতান মুহাম্মদ চিলবির ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল। বিখ্যাত আরব পদব্রজক ইবনে আরবশাহ তাঁর শাসনামলে আদির্না পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সুলতানের উপকার ও চমৎকার ব্যবহারে তিনি সিক্ত হয়েছিলেন। আদির্নাতে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে ইবনে আরবশাহ প্রচুর অনুবাদের কাজে স্বাক্ষর রেখেছেন। এমনকি তিনি রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। সুলতান তাঁকে ব্যক্তিগত লেখক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সুলতানের মৃত্যুর পর ইবনে আরবশাহ পুনরায় কায়রোতে ফিরে আসেন। প্রাসাদে থাকাকালীন তাঁর অনূদিত ‘তাফসিরে আবিল লাইস সমরকন্দি’ পরবর্তীতে তিনি মুহাম্মদ চিলবির নামে উৎসর্গ করেন।
.