সফলতার সূত্র
বই : সফলতার সূত্রলেখক : আরিফুল ইসলামপ্রকাশনায় : Muhammad Publicationতাবুক যুদ্ধে নারী ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অক্ষম ব্যতীত সবার জন্য অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিলো। সেই যুদ্ধে আজ প্রস্তুতি নেবো, কাল প্রস্তুতি নেবো বলে কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সময়মতো প্রস্তুতি নিতে পারেননি। ফলে, তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। যুদ্ধের ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোঁজ নিলেন কে কে এসেছে আর কে কে আসেনি। তখন খোঁজ পড়লো কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর। একজন বলে উঠলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাঁর ধন-সম্পদ ও অহংকার তাঁকে আসতে দেয়নি।” কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর অনুপস্থিতিতে তাঁর ব্যাপারে নিন্দা করলেন একজন সাহাবী। ঠিক সেই সময় আরেকজন সাহাবী তাঁর পক্ষে দাঁড়ালেন। তিনি হলেন মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বললেন, “তুমি যা বললে, তা ঠিক নয়। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তাঁকে উত্তম ব্যক্তি হিশেবেই জানি।” [সহীহ বুখারী: ৪৪১৮]একজন মুসলিম ভাইয়ের অগোচরে মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই ভাইয়ের নিন্দা করতে দিচ্ছেন না, তাঁর ব্যাপারে সুধারণা রাখছেন। মুয়াজ ইবনে জাবাল অজুহাত খুঁজছেন, নিশ্চয়ই কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর কিছু হয়েছে যার ফলে তিনি আসতে পারেননি। তিনি তো ভালো মানুষ, আমলদার ব্যক্তি। অহংকার করে পেছনে থাকা তাঁর কাজ না। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর সময়ে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন, তাঁর বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিতেন। প্রত্যেক যুগে যেরকম থাকে আরকী; একজনের সাথে আরেকজনের বড়ো কোনো মতপার্থক্য থাকলে যেমন হয়। এমন একজন আলেম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে অনেক কটু মন্তব্য করতেন, তাঁর সমালোচনা করতেন, সবাইকে তাঁর ব্যাপারে সতর্ক করে দিতেন। একদিন সেই আলেম ইন্তেকাল করেন। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর শিক্ষক ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে ‘সুসংবাদ’ দিতে যান- যে লোক আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলতো, সে ইন্তেকাল করেছে।ইমাম ইবনে তাইমিয়া যখন মৃত্যুসংবাদ শুনলেন, তখন ইন্না-লিল্লাহ পড়ার পর ঐ আলেমের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করেন। অতঃপর তাঁর ছাত্রকে নিয়ে মৃত আলেমের বাড়ি যান, পরিবারকে সান্ত্বনা জানান। মৃতের পরিবারকে ইমাম ইবনে তাইমিয়া জানান- ‘তোমাদের কী কী লাগবে বলো, আমি ব্যবস্থা করবো। এই অবস্থায় তোমাদের কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না’।ইমাম ইবনে তাইমিয়ার এমন উদার মানসিকতা দেখে পরিবারটি মুগ্ধ হয়। তারা ইমাম ইবনে তাইমিয়ার জন্য দু’আ করে।ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, “ইমাম ইবনে তাইমিয়ার৷ বন্ধুরা বলাবলি করে, ‘ইমাম ইবনে তাইমিয়া যেভাবে তাঁর শত্রুদের সাথে আচরণ করেন, আমরা যদি এমনটা আমাদের বন্ধুদের সাথে করতে পারতাম’। আমি কখনো তাকে তাঁর প্রতিপক্ষ কারো বিরুদ্ধে বদ-দু’আ করতে শুনিনি। যদি দু’আ করেন, তাহলে তাদের পক্ষে দু’আ করেন।”আমাদের পূর্ববর্তীগণ নিজেরা কী পরছেন সেই ব্যাপারেও সচেতন ছিলো। তাদের ভালো জামা দেখে অন্য কেউ কষ্ট পাবে কিনা এটা তারা ভাবতেন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:“এটা হচ্ছে আখিরাতের নিবাস, যা আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করি, যারা যমিনে ঔদ্ধতা দেখাতে চায় না এবং ফাসাদও চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা কাসাস ২৮: ৮৩]এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, তার জুতার ফিতা তার সঙ্গীর জুতার ফিতার চেয়ে ভালো হোক, সে এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।” [তাফসীর ইবনে কাসির: ৬/৫৫৬]অর্থাৎ, আপনার নিজের খাওয়া-পরার ক্ষেত্রেও আপনি অন্যকে অবজ্ঞা করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিশেবে উপস্থাপন করতে গেলে ভাবতে হবে। সালাফগণ এই ছোটোখাটো ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখতেন, আত্ম-অহংকার হচ্ছে কিনা।
An Najahah Shop
Category List
All products

বই : সফলতার সূত্র
লেখক : আরিফুল ইসলাম
প্রকাশনায় : Muhammad Publication
তাবুক যুদ্ধে নারী ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অক্ষম ব্যতীত সবার জন্য অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিলো। সেই যুদ্ধে আজ প্রস্তুতি নেবো, কাল প্রস্তুতি নেবো বলে কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সময়মতো প্রস্তুতি নিতে পারেননি। ফলে, তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
যুদ্ধের ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোঁজ নিলেন কে কে এসেছে আর কে কে আসেনি। তখন খোঁজ পড়লো কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর। একজন বলে উঠলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাঁর ধন-সম্পদ ও অহংকার তাঁকে আসতে দেয়নি।”
কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর অনুপস্থিতিতে তাঁর ব্যাপারে নিন্দা করলেন একজন সাহাবী। ঠিক সেই সময় আরেকজন সাহাবী তাঁর পক্ষে দাঁড়ালেন। তিনি হলেন মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বললেন, “তুমি যা বললে, তা ঠিক নয়। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তাঁকে উত্তম ব্যক্তি হিশেবেই জানি।” [সহীহ বুখারী: ৪৪১৮]
একজন মুসলিম ভাইয়ের অগোচরে মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই ভাইয়ের নিন্দা করতে দিচ্ছেন না, তাঁর ব্যাপারে সুধারণা রাখছেন। মুয়াজ ইবনে জাবাল অজুহাত খুঁজছেন, নিশ্চয়ই কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর কিছু হয়েছে যার ফলে তিনি আসতে পারেননি। তিনি তো ভালো মানুষ, আমলদার ব্যক্তি। অহংকার করে পেছনে থাকা তাঁর কাজ না।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর সময়ে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন, তাঁর বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিতেন। প্রত্যেক যুগে যেরকম থাকে আরকী; একজনের সাথে আরেকজনের বড়ো কোনো মতপার্থক্য থাকলে যেমন হয়।
এমন একজন আলেম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে অনেক কটু মন্তব্য করতেন, তাঁর সমালোচনা করতেন, সবাইকে তাঁর ব্যাপারে সতর্ক করে দিতেন। একদিন সেই আলেম ইন্তেকাল করেন।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর শিক্ষক ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে ‘সুসংবাদ’ দিতে যান- যে লোক আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলতো, সে ইন্তেকাল করেছে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া যখন মৃত্যুসংবাদ শুনলেন, তখন ইন্না-লিল্লাহ পড়ার পর ঐ আলেমের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করেন। অতঃপর তাঁর ছাত্রকে নিয়ে মৃত আলেমের বাড়ি যান, পরিবারকে সান্ত্বনা জানান। মৃতের পরিবারকে ইমাম ইবনে তাইমিয়া জানান- ‘তোমাদের কী কী লাগবে বলো, আমি ব্যবস্থা করবো। এই অবস্থায় তোমাদের কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না’।
ইমাম ইবনে তাইমিয়ার এমন উদার মানসিকতা দেখে পরিবারটি মুগ্ধ হয়। তারা ইমাম ইবনে তাইমিয়ার জন্য দু’আ করে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, “ইমাম ইবনে তাইমিয়ার৷ বন্ধুরা বলাবলি করে, ‘ইমাম ইবনে তাইমিয়া যেভাবে তাঁর শত্রুদের সাথে আচরণ করেন, আমরা যদি এমনটা আমাদের বন্ধুদের সাথে করতে পারতাম’। আমি কখনো তাকে তাঁর প্রতিপক্ষ কারো বিরুদ্ধে বদ-দু’আ করতে শুনিনি। যদি দু’আ করেন, তাহলে তাদের পক্ষে দু’আ করেন।”
আমাদের পূর্ববর্তীগণ নিজেরা কী পরছেন সেই ব্যাপারেও সচেতন ছিলো। তাদের ভালো জামা দেখে অন্য কেউ কষ্ট পাবে কিনা এটা তারা ভাবতেন।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
“এটা হচ্ছে আখিরাতের নিবাস, যা আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করি, যারা যমিনে ঔদ্ধতা দেখাতে চায় না এবং ফাসাদও চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা কাসাস ২৮: ৮৩]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, তার জুতার ফিতা তার সঙ্গীর জুতার ফিতার চেয়ে ভালো হোক, সে এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।” [তাফসীর ইবনে কাসির: ৬/৫৫৬]
অর্থাৎ, আপনার নিজের খাওয়া-পরার ক্ষেত্রেও আপনি অন্যকে অবজ্ঞা করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিশেবে উপস্থাপন করতে গেলে ভাবতে হবে। সালাফগণ এই ছোটোখাটো ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখতেন, আত্ম-অহংকার হচ্ছে কিনা।
লেখক : আরিফুল ইসলাম
প্রকাশনায় : Muhammad Publication
তাবুক যুদ্ধে নারী ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অক্ষম ব্যতীত সবার জন্য অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিলো। সেই যুদ্ধে আজ প্রস্তুতি নেবো, কাল প্রস্তুতি নেবো বলে কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সময়মতো প্রস্তুতি নিতে পারেননি। ফলে, তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
যুদ্ধের ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোঁজ নিলেন কে কে এসেছে আর কে কে আসেনি। তখন খোঁজ পড়লো কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর। একজন বলে উঠলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাঁর ধন-সম্পদ ও অহংকার তাঁকে আসতে দেয়নি।”
কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর অনুপস্থিতিতে তাঁর ব্যাপারে নিন্দা করলেন একজন সাহাবী। ঠিক সেই সময় আরেকজন সাহাবী তাঁর পক্ষে দাঁড়ালেন। তিনি হলেন মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বললেন, “তুমি যা বললে, তা ঠিক নয়। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তাঁকে উত্তম ব্যক্তি হিশেবেই জানি।” [সহীহ বুখারী: ৪৪১৮]
একজন মুসলিম ভাইয়ের অগোচরে মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই ভাইয়ের নিন্দা করতে দিচ্ছেন না, তাঁর ব্যাপারে সুধারণা রাখছেন। মুয়াজ ইবনে জাবাল অজুহাত খুঁজছেন, নিশ্চয়ই কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর কিছু হয়েছে যার ফলে তিনি আসতে পারেননি। তিনি তো ভালো মানুষ, আমলদার ব্যক্তি। অহংকার করে পেছনে থাকা তাঁর কাজ না।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর সময়ে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন, তাঁর বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিতেন। প্রত্যেক যুগে যেরকম থাকে আরকী; একজনের সাথে আরেকজনের বড়ো কোনো মতপার্থক্য থাকলে যেমন হয়।
এমন একজন আলেম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে অনেক কটু মন্তব্য করতেন, তাঁর সমালোচনা করতেন, সবাইকে তাঁর ব্যাপারে সতর্ক করে দিতেন। একদিন সেই আলেম ইন্তেকাল করেন।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর শিক্ষক ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে ‘সুসংবাদ’ দিতে যান- যে লোক আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলতো, সে ইন্তেকাল করেছে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া যখন মৃত্যুসংবাদ শুনলেন, তখন ইন্না-লিল্লাহ পড়ার পর ঐ আলেমের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করেন। অতঃপর তাঁর ছাত্রকে নিয়ে মৃত আলেমের বাড়ি যান, পরিবারকে সান্ত্বনা জানান। মৃতের পরিবারকে ইমাম ইবনে তাইমিয়া জানান- ‘তোমাদের কী কী লাগবে বলো, আমি ব্যবস্থা করবো। এই অবস্থায় তোমাদের কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না’।
ইমাম ইবনে তাইমিয়ার এমন উদার মানসিকতা দেখে পরিবারটি মুগ্ধ হয়। তারা ইমাম ইবনে তাইমিয়ার জন্য দু’আ করে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, “ইমাম ইবনে তাইমিয়ার৷ বন্ধুরা বলাবলি করে, ‘ইমাম ইবনে তাইমিয়া যেভাবে তাঁর শত্রুদের সাথে আচরণ করেন, আমরা যদি এমনটা আমাদের বন্ধুদের সাথে করতে পারতাম’। আমি কখনো তাকে তাঁর প্রতিপক্ষ কারো বিরুদ্ধে বদ-দু’আ করতে শুনিনি। যদি দু’আ করেন, তাহলে তাদের পক্ষে দু’আ করেন।”
আমাদের পূর্ববর্তীগণ নিজেরা কী পরছেন সেই ব্যাপারেও সচেতন ছিলো। তাদের ভালো জামা দেখে অন্য কেউ কষ্ট পাবে কিনা এটা তারা ভাবতেন।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
“এটা হচ্ছে আখিরাতের নিবাস, যা আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করি, যারা যমিনে ঔদ্ধতা দেখাতে চায় না এবং ফাসাদও চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা কাসাস ২৮: ৮৩]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, তার জুতার ফিতা তার সঙ্গীর জুতার ফিতার চেয়ে ভালো হোক, সে এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।” [তাফসীর ইবনে কাসির: ৬/৫৫৬]
অর্থাৎ, আপনার নিজের খাওয়া-পরার ক্ষেত্রেও আপনি অন্যকে অবজ্ঞা করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিশেবে উপস্থাপন করতে গেলে ভাবতে হবে। সালাফগণ এই ছোটোখাটো ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখতেন, আত্ম-অহংকার হচ্ছে কিনা।
সফলতার সূত্র
230 BDT280 BDTSave 50 BDT
1
বই : সফলতার সূত্র
লেখক : আরিফুল ইসলাম
প্রকাশনায় : Muhammad Publication
তাবুক যুদ্ধে নারী ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অক্ষম ব্যতীত সবার জন্য অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিলো। সেই যুদ্ধে আজ প্রস্তুতি নেবো, কাল প্রস্তুতি নেবো বলে কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সময়মতো প্রস্তুতি নিতে পারেননি। ফলে, তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
যুদ্ধের ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোঁজ নিলেন কে কে এসেছে আর কে কে আসেনি। তখন খোঁজ পড়লো কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর। একজন বলে উঠলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাঁর ধন-সম্পদ ও অহংকার তাঁকে আসতে দেয়নি।”
কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর অনুপস্থিতিতে তাঁর ব্যাপারে নিন্দা করলেন একজন সাহাবী। ঠিক সেই সময় আরেকজন সাহাবী তাঁর পক্ষে দাঁড়ালেন। তিনি হলেন মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বললেন, “তুমি যা বললে, তা ঠিক নয়। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তাঁকে উত্তম ব্যক্তি হিশেবেই জানি।” [সহীহ বুখারী: ৪৪১৮]
একজন মুসলিম ভাইয়ের অগোচরে মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই ভাইয়ের নিন্দা করতে দিচ্ছেন না, তাঁর ব্যাপারে সুধারণা রাখছেন। মুয়াজ ইবনে জাবাল অজুহাত খুঁজছেন, নিশ্চয়ই কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর কিছু হয়েছে যার ফলে তিনি আসতে পারেননি। তিনি তো ভালো মানুষ, আমলদার ব্যক্তি। অহংকার করে পেছনে থাকা তাঁর কাজ না।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর সময়ে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন, তাঁর বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিতেন। প্রত্যেক যুগে যেরকম থাকে আরকী; একজনের সাথে আরেকজনের বড়ো কোনো মতপার্থক্য থাকলে যেমন হয়।
এমন একজন আলেম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে অনেক কটু মন্তব্য করতেন, তাঁর সমালোচনা করতেন, সবাইকে তাঁর ব্যাপারে সতর্ক করে দিতেন। একদিন সেই আলেম ইন্তেকাল করেন।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর শিক্ষক ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে ‘সুসংবাদ’ দিতে যান- যে লোক আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলতো, সে ইন্তেকাল করেছে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া যখন মৃত্যুসংবাদ শুনলেন, তখন ইন্না-লিল্লাহ পড়ার পর ঐ আলেমের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করেন। অতঃপর তাঁর ছাত্রকে নিয়ে মৃত আলেমের বাড়ি যান, পরিবারকে সান্ত্বনা জানান। মৃতের পরিবারকে ইমাম ইবনে তাইমিয়া জানান- ‘তোমাদের কী কী লাগবে বলো, আমি ব্যবস্থা করবো। এই অবস্থায় তোমাদের কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না’।
ইমাম ইবনে তাইমিয়ার এমন উদার মানসিকতা দেখে পরিবারটি মুগ্ধ হয়। তারা ইমাম ইবনে তাইমিয়ার জন্য দু’আ করে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, “ইমাম ইবনে তাইমিয়ার৷ বন্ধুরা বলাবলি করে, ‘ইমাম ইবনে তাইমিয়া যেভাবে তাঁর শত্রুদের সাথে আচরণ করেন, আমরা যদি এমনটা আমাদের বন্ধুদের সাথে করতে পারতাম’। আমি কখনো তাকে তাঁর প্রতিপক্ষ কারো বিরুদ্ধে বদ-দু’আ করতে শুনিনি। যদি দু’আ করেন, তাহলে তাদের পক্ষে দু’আ করেন।”
আমাদের পূর্ববর্তীগণ নিজেরা কী পরছেন সেই ব্যাপারেও সচেতন ছিলো। তাদের ভালো জামা দেখে অন্য কেউ কষ্ট পাবে কিনা এটা তারা ভাবতেন।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
“এটা হচ্ছে আখিরাতের নিবাস, যা আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করি, যারা যমিনে ঔদ্ধতা দেখাতে চায় না এবং ফাসাদও চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা কাসাস ২৮: ৮৩]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, তার জুতার ফিতা তার সঙ্গীর জুতার ফিতার চেয়ে ভালো হোক, সে এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।” [তাফসীর ইবনে কাসির: ৬/৫৫৬]
অর্থাৎ, আপনার নিজের খাওয়া-পরার ক্ষেত্রেও আপনি অন্যকে অবজ্ঞা করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিশেবে উপস্থাপন করতে গেলে ভাবতে হবে। সালাফগণ এই ছোটোখাটো ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখতেন, আত্ম-অহংকার হচ্ছে কিনা।
লেখক : আরিফুল ইসলাম
প্রকাশনায় : Muhammad Publication
তাবুক যুদ্ধে নারী ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অক্ষম ব্যতীত সবার জন্য অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিলো। সেই যুদ্ধে আজ প্রস্তুতি নেবো, কাল প্রস্তুতি নেবো বলে কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সময়মতো প্রস্তুতি নিতে পারেননি। ফলে, তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
যুদ্ধের ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোঁজ নিলেন কে কে এসেছে আর কে কে আসেনি। তখন খোঁজ পড়লো কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর। একজন বলে উঠলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাঁর ধন-সম্পদ ও অহংকার তাঁকে আসতে দেয়নি।”
কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর অনুপস্থিতিতে তাঁর ব্যাপারে নিন্দা করলেন একজন সাহাবী। ঠিক সেই সময় আরেকজন সাহাবী তাঁর পক্ষে দাঁড়ালেন। তিনি হলেন মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বললেন, “তুমি যা বললে, তা ঠিক নয়। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তাঁকে উত্তম ব্যক্তি হিশেবেই জানি।” [সহীহ বুখারী: ৪৪১৮]
একজন মুসলিম ভাইয়ের অগোচরে মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই ভাইয়ের নিন্দা করতে দিচ্ছেন না, তাঁর ব্যাপারে সুধারণা রাখছেন। মুয়াজ ইবনে জাবাল অজুহাত খুঁজছেন, নিশ্চয়ই কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর কিছু হয়েছে যার ফলে তিনি আসতে পারেননি। তিনি তো ভালো মানুষ, আমলদার ব্যক্তি। অহংকার করে পেছনে থাকা তাঁর কাজ না।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর সময়ে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন, তাঁর বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিতেন। প্রত্যেক যুগে যেরকম থাকে আরকী; একজনের সাথে আরেকজনের বড়ো কোনো মতপার্থক্য থাকলে যেমন হয়।
এমন একজন আলেম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে অনেক কটু মন্তব্য করতেন, তাঁর সমালোচনা করতেন, সবাইকে তাঁর ব্যাপারে সতর্ক করে দিতেন। একদিন সেই আলেম ইন্তেকাল করেন।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর শিক্ষক ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে ‘সুসংবাদ’ দিতে যান- যে লোক আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলতো, সে ইন্তেকাল করেছে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া যখন মৃত্যুসংবাদ শুনলেন, তখন ইন্না-লিল্লাহ পড়ার পর ঐ আলেমের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করেন। অতঃপর তাঁর ছাত্রকে নিয়ে মৃত আলেমের বাড়ি যান, পরিবারকে সান্ত্বনা জানান। মৃতের পরিবারকে ইমাম ইবনে তাইমিয়া জানান- ‘তোমাদের কী কী লাগবে বলো, আমি ব্যবস্থা করবো। এই অবস্থায় তোমাদের কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না’।
ইমাম ইবনে তাইমিয়ার এমন উদার মানসিকতা দেখে পরিবারটি মুগ্ধ হয়। তারা ইমাম ইবনে তাইমিয়ার জন্য দু’আ করে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, “ইমাম ইবনে তাইমিয়ার৷ বন্ধুরা বলাবলি করে, ‘ইমাম ইবনে তাইমিয়া যেভাবে তাঁর শত্রুদের সাথে আচরণ করেন, আমরা যদি এমনটা আমাদের বন্ধুদের সাথে করতে পারতাম’। আমি কখনো তাকে তাঁর প্রতিপক্ষ কারো বিরুদ্ধে বদ-দু’আ করতে শুনিনি। যদি দু’আ করেন, তাহলে তাদের পক্ষে দু’আ করেন।”
আমাদের পূর্ববর্তীগণ নিজেরা কী পরছেন সেই ব্যাপারেও সচেতন ছিলো। তাদের ভালো জামা দেখে অন্য কেউ কষ্ট পাবে কিনা এটা তারা ভাবতেন।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
“এটা হচ্ছে আখিরাতের নিবাস, যা আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করি, যারা যমিনে ঔদ্ধতা দেখাতে চায় না এবং ফাসাদও চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা কাসাস ২৮: ৮৩]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, তার জুতার ফিতা তার সঙ্গীর জুতার ফিতার চেয়ে ভালো হোক, সে এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।” [তাফসীর ইবনে কাসির: ৬/৫৫৬]
অর্থাৎ, আপনার নিজের খাওয়া-পরার ক্ষেত্রেও আপনি অন্যকে অবজ্ঞা করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিশেবে উপস্থাপন করতে গেলে ভাবতে হবে। সালাফগণ এই ছোটোখাটো ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখতেন, আত্ম-অহংকার হচ্ছে কিনা।