An Najahah Shop
EN

দোস্ত,জানেমান।

An Najahah Shop

দোস্ত,জানেমান।
  • দোস্ত,জানেমান।_img_0

দোস্ত,জানেমান।

400 BDT800 BDTSave 400 BDT
1

বই: দোস্ত,জানেমান।
লেখক:মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ
প্রকাশক:মাকতাবাতুল আযহার

সামগ্রিক বিচারে যে বস্তুকে উৎকৃষ্ট ও শ্রেষ্ঠত্বের গুনে বিশেষিত করা হয়ে থাকে, যদি বলা হয় এটাই মহৎ,উত্তম তাহলে সত্যের মান রাখা হয়। শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠিতে আবার শুধু মাত্র এক বা দু'টি দিক লক্ষ্য করেই পর্যালোচনা চূড়ান্ত গণ্য করা হয়। তবে যেহেতু সামগ্রিকতা তাতে লুপ্ত,তাই এক বিচারে শ্রেষ্ঠ হলেও অন্য বিবেচনায় সেটা ত্রুটিপূর্ণ। এ কায়দাটা ঠিক মানবের ক্ষেত্রেও সংযোজিত হয়ে থাকে।
শায়খ আতিকুল্লার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে, সেটা সামগ্রিক বিচারে। তার সাহিত্যমান নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা হতে পারে মানি।তবে তার চিন্তা-চেতনা, বোধ-বিশ্বাস, সৃজনশীল দ্বীনি মনন ও ভাবনার পৃথিবী নিয়ে খানিক মেধা ঘাটলে অভিভূত না হয়ে সত্যিই পারা যায় না। "দোস্ত, জানেমান" কে এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ রূপে ধরা যায়। সৃজনশীল দাওয়া কর্মপন্থার সুচিন্তক কার্যসম্পাদনকারীর একটি অনবদ্য কর্ম, যা ভাবতে শেখাতে পারে নতুন করে এবং হতে পারে শুদ্ধ মন- মননের রসসমৃদ্ধ অন্ন সম্পূরক। তাতে প্রেম আছে।দ্রোহ আছে।আছে ইতিহাসের অলিগলির অজানা বাক্ পেরিয়ে জীবনের নানামাত্রিক উপাখ্যান ও কাহিনীর বহুরঙা প্রতিচ্ছবি। যদিও এটিকে উপন্যাস ক্যাটাগরিতে গণ্য করা হয়, কিন্তু সচরাচর উপন্যাসের রীতি ও ধাচ্ বহির্ভূত "দোস্ত জানেমান "বইটি।

"দোস্ত মানে দুটি অস্তি। দুটি অস্তিত্ব। দুটি সত্তা। জানেমান মানে আমার জান।এ বই আসলে বাস্তব ও কল্পনার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা কিছু গল্প, কিছু কল্প। "এভাবে লেখক বই ও নাম সম্পর্কে বিন্দু ধারণা ধরিয়ে শুরু করেছেন আপন বইটি।

বইটি মূলত দু'ভাগে বিভক্ত। প্রথমভাগে দুজন মহান ব্যক্তির জীবনী ও পর্যালোচনা। দুর্ভাগ্য, যাদের আমরা চিনি না। অথচ সর্বাগ্রে জানার দরকার ছিল তাদের।দ্বিতীয় ভাগে জৈবনিক আকারের উপন্যাস।মূলত প্রথম ভাগের উপর ভিত্তি করেই রচিত দ্বিতীয় ভাগের পূর্ণদৈর্ঘ্য উপন্যাসখানা।
প্রথম ভাগে যে দুজন মহান ব্যক্তির জীবনী, তাদের একজন হলেন ডঃ আব্দুর রহমান সুমাইত।দ্বিতীয়জন আলী ইজ্জত বেগোভিচ। বইয়ে বর্ণিত দুজনের জীবনীর সারাংশ রূপে দু'একটি কথা হতেই পারে।

ডঃ আব্দুর রহমান সুমাইত:
অদ্ভুত এক মানব। আল্লাহ যে বিশেষ অনুগ্রহ করে এমন দু-একজন মানব আমাদের মাঝে পাঠিয়ে থাকেন, উনাকে পর্যালোচনা করলে এ কথাটির সত্যতা পেয়ে যাই ঠিক তার মাঝেই। এক জীবনে একা একটি মানুষ কত কিছু করে যেতে পারে তিনি দেখিয়েছেন আমাদের। বর্তমানকালের মুসলিম উম্মার জন্য উদাহরণ দেয়ার মত আছেন ডঃ আব্দুর রহমান সুমাইত।শ্রেষ্ঠ দানশীল।শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ। শ্রেষ্ঠ দাতব্য কার্যসম্পাদনকারী। মুসলিম উম্মার জন্য শ্রেষ্ঠ দয়াশীল ব্যক্তিত্ব। আফ্রিকাসহ বিশ্বের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে অকাতর অবদান রেখে যাওয়া__তাও বিরাট থেকে বিরাটাকার পরিমাণে, সত্যিই আশ্চর্যের লাগে। যার ৩০বছরের দাওয়াতী জীবনে তার উদ্যোগে পরিচালিত দাওয়াতে ১১ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। ৫৭০০এরও বেশী মসজিদ নির্মাণ করেছেন তিনি। ২০৪টিরও বেশি ইসলামিক সেন্টার, ৫১মিলিয়নের বেশি কুরআন কারীম নিজ উদ্যোগে বিতরণ, ৯৫০০এরও বেশি গভীর কূপ খনন, ১৯১৫ হাজারেরও বেশি এতিম শিশুকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা, ৯৫০০০এরও বেশি ছাত্রকে সার্বিক শিক্ষা সহায়তা, ৮৬৮টি স্কুল, ৪ টি ইউনিভার্সিটি, ১২৪টিরও বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা, ৮৪০০ এর বেশি মাদ্রাসা স্থাপন, ৩২৮৮জন শিক্ষক ও দাঈকে প্রতিমাসে নিয়মিত পূর্ণ মাসিক ভাতা দেওয়াসহ এমন মানবীয় হাজারো কর্ম একাই আঞ্জাম দিয়ে দেখিয়ে গেছেন তিনি।বস্তুত উনাকে নিয়ে আলোচনা শুরু করলে আলোচনা বাড়বে বৈ সমাপ্ত হবে না।।বহির্বিশ্বে উনাকে নিয়ে শত শত থিসিস, পোর্টাল প্রকাশ পেয়েছে, যা আমাদের জানা কর্তব্য ছিল সর্বাগ্রেই।বড় বড় রাজা বাদশাহ,প্রেসিডেন্টরাও একাকী এত অবদান রাখতে পারেনি তার মত। "দোস্ত জানেমান" বইটিতে মোটামুটি বিস্তারিত আকারে তাকে আলোচনা করেছেন লেখক।

দ্বিতীয়তে যার জীবনী,তিনি হলেন আলী ইজ্জত বেগোভিচ। বসনিয়ার স্বাধীনতা অর্জনের মহানায়ক বলে ইতিহাস যাকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। সার্বদের গণহত্যা ও অত্যাচারে জর্জরিত ও বিলুপ্ত হতে যাওয়া বসনিয়ান মুসলিমরা যখন সকল সহায় ও আশা হারিয়ে বেদিশা ও পশুত্বের জীবন কাটাচ্ছিল, তখন তাদেরকে স্বাধীনতা ও সংগ্রামের চেতনায় আগলে রেখে কর্ণধার হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন আলী ইজ্জত বেগোভিচ।১৯৯২থেকে দীর্ঘ চার বছর মেয়াদি যে যুদ্ধ বসনিয়ায় আরম্ভ করেছিল সার্বরা,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে এমন নৃশংস গণহত্যা ও ন্যক্কারজনক ঘটনা পূর্বে ঘটেনি। এই যুদ্ধে ২২লক্ষ বসনিয়ান মুসলিম ভিটেমাটিহারা হয় এবং মারা যায় তিন লক্ষ ১২হাজার মানুষ, যা ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। সেই নিরুপায় বসনিয়ান মুসলিমদের হাল ধরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আলী ইজ্জত বেগোভিচ। অবশেষে ডেটন চুক্তির মাধ্যমে,__ যদিও তা ছিল বসনিয়ানদের জন্য লজ্জাজনক চুক্তি__ তবুও আলী ইজ্জত সকল শর্ত মেনে নিয়ে তার মাধ্যমে বসনিয়ান জাতিকে নির্মূল হওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন।যারা বসনিয়ার ইতিহাস সম্পর্কে জানাশোনা রাখেন তারা এর গুরুত্ব বুঝতে ভুল করবেন না জানি। এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব ও মুসলিম বিশ্বের প্রজ্ঞাবান মহানায়ক, কজনই বা তার সম্পর্কে জানি।নিজেদেরই ইতিহাস না জানলে সে আসলেই পঙ্গু। আতিক উল্লাহ সাহেব "দোস্ত,জানেমান" তে বিস্তারিত পরিসরে উনার জীবনী তুলে ধরেছেন।মূলত প্রথম ভাগের যে দুজনের জীবনী চরিত,তাদের ব্যাপারে জানা, আমি মনে করি মুসলিম নাম মাত্রেরই কর্তব্য।

বইটির দ্বিতীয় ভাগে রচিত হয়েছে জীবনধর্মী এক বিরল উপন্যাস।উপন্যাসের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে লেখক উপন্যাসটিকে রচেছেন আত্মজৈবনিক আকারে।এতে ভিন্নরকমের উপলব্ধি অর্জিত হয়।একই ঘটনা ও একই জীবনপ্রবাহের নানামাত্রিক বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গি এবং বুঝা যায়,আমরা সকলে একই ঘটনার ভেতর দিয়ে অতিক্রম করেও,একেকজনের কাছে জীবনটা বিশ্লেষিত হয় একেকভাবে। তার কাছে জীবনটা পৃথিবীটা একরকম,অন্যের কাছে ঠিক বিপরীত রকমের।একজনের ভালোবাসা আরেকজনের ঘৃণায় পর্যবসিত।ঠিক এরকম ভঙ্গিতেই "দোস্ত,জানেমান" বইটি রচিত বললে সঠিক বলা হয়।

প্রথমে শুরু করেছেন দোস্ত হুজুরকে দিয়ে।দোস্ত হুজুরের দ্বীনি মেজাজ,দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যক্রমের পদ্ধতি বর্ণনার মধ্যদিয়ে তিনি মূলত পাঠকের কাছে একটি প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত টেনে বুঝিয়েছেন,শত প্রতিকূলতার মধ্যেও গণ্ডগ্রামে অনাড়ম্বরভাবে দ্বীনি কার্য চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।দোস্ত হুজুর থেকে ঘটনার ডালপালা বিস্তার করে এগিয়ে গিয়েছেন এক বৈচিত্র্যময় জীবনে।যেখানে প্রেম,ভালোবাসা আছে।ত্যাগ আছে।দূর্যোগ,অসহায়ত্ব থেকে নিয়ে আছে দাওয়তি কর্মপন্থার রোমাঞ্চকর বিবরণ পর্যন্ত। উপন্যাসের মূল চরিত্র হাসান।তার জীবনের বৈচিত্র্যময় উপাখ্যানের নির্মল বর্ননা।রুফাইদার চরিত্রে উঠে এসেছে এক বিস্ময়কর আত্মত্যাগী নারীর জীবন।সাথে উঠে এসেছে ফিলিস্তিন ও বসনিয়ার ইতিহাস,হালচাল ও জীবনের চোরাচালানের শ্বাসরুদ্ধকর সত্য কাহিনী। উপন্যাসের আরেক মহিয়সী রমণী চরিত্র নাবিলা।যাকে আবিষ্কার করি চরিত্র,সংযম ও ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্তের ভূমিকায়।লেখক যে কিভাবে এরকম চরিত্র আকেন,অবাক মানার ব্যাপার।

বইটি পাঠ করলে বলা যায় পাঠকের জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে এবং নতুন প্রেরণা জাগবে আশাকরি।পাঠক পড়তে পড়তে হয়ত কোথাও হারিয়ে যাবে।কোন ফাকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সংকল্প করে বসবে,এবং ছন্দে ছন্দে ভেসে যাবে জীবনের নূতন উদ্যানে।ছত্রে ছত্রে আছে জ্ঞান, দীক্ষা। আছে ভালোবাসা প্রকাশের উদ্ধৃত পঙক্তিমালা।যেমন জীবনানন্দের কবিতা;
"আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন,কতদিন আমিও তোমাকে খুঁজি নাকো__....."
আছে উর্দু সরস পঙক্তিগুচ্ছ।যেমন,
"আজ রাত চাঁদনী হ্যয় ওর তুম মেরি সাথ্ হো/বাস্ য়ে দুআ হ্যয় মেরি, এ্যয়সি হার এক রাত হো।"
আরো যেমন;
"ইয়ে রাতে,ইয়ে মওসম,নদী কা কিনারা,ইয়ে চাঞল হাওয়া/কাহা দো দিলু নে,কে মিলকার কাভী হাম না হোঙ্গে জুদা।"
এভাবেই লেখক পঙক্তি বিছিয়ে বিছিয়ে করে রেখেছেন খানিকটা কাব্যময়।

মোদ্দকথা যেটা,সামগ্রিকতার বিচারে আমার পড়া শ্রেষ্ঠ বইয়ের তালিকায় "দোস্ত,জানেমান"কেও অন্তর্ভুক্ত করে রাখবো এবং সকলকে বইটি পড়ার জন্য পরামর্শ বিলি করে থাকবো।বইটি আগামীতে বহুল প্রচারনা ও নাম অর্জন করবে, এটা আমি বলতে পারি।মাকতাবাতুল আযহারের সুন্দর একটি কাজ,যা সর্বাঙ্গীন প্রশংসাযোগ্য।বইটির শেষ কবিতা দিয়ে কথা সমাপ্ত করছি।

"এইসব সারেগামা পেরিয়ে তোমার কাছে দুদণ্ড বসতে ইচ্ছে করে,
আমার তৃতীয় চোখ হারিয়ে গেছে
সিড়ি দিয়ে যে উঠে আসছে আমি তার মুখও দেখিনি।
তোমাকে দুঃখিত করা আমার জীবনধর্ম নয়,
চলে যেতে হয় বলে চলে যাচ্ছি__
না হলে তো আরেকটু থাকতাম।"