সিন্ধু থেকে বঙ্গ ( 1ও 2)
ইতিহাস এমন এক ভেলা— যাতে ভেসে আবিস্কার করা যায় নিজেকে। ইতিহাসবিমুখ জাতি তাই আত্মপরিচয়ের সংকটে কালের উচ্ছিষ্ট হয়ে বেঁচে থাকে। সময় তাদের সঙ্গ দেয় না। জীবন তাদের শোনায় না সাফল্যগাঁথা। শতাব্দী তার পাতায় লিখে না তাদের নাম। ইতিহাস শব্দটিকে বিভিন্ন ব্যখ্যা করা যায়; বস্তুত ইতিহাস তো নিজেকে দেখতে— সময়ের দর্পণ।ভারতীয় উপমহাদেশে ইতিহাস অজস্র ঘূর্ণিপাক খেয়েছে, বাঁক নিয়েছে নানাসময় নানাদিকে। মুসলমানদের উত্থান-পতনের হিসেবনিকেশ নানাজন ব্যাখ্যা করেছে নানাভাবে। কারো কলম আশ্রয় দিয়েছে তো কারো কলম ক্ষতবিক্ষত করেছে কাগজকে; হৃদয়কে। হাজার বছরের এই ইতিহাসকে একজন আস্থাশীল লেখকের কলম হয়ে মলাটবদ্ধাকারে হাতে পাওয়া— বস্তত জাতিগতভাবে বাঙালি মুসলিমদের সৌভাগ্য বটে। এ ধরণের বই পড়ে আত্মগৌরবে বিভোরিত উৎসবমুখর তরুণরা নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে দু’চারলাইন বলতে শিখবে, ভাবতে শিখবে আগত নব ইতিহাস রচনার প্রেক্ষাপট। বইয়ের সূচিপত্র দেখে দু’চার কথা বলে দিলেও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে রয়ে যায় দায়বদ্ধতা। এই ভাসা ভাসা কথাগুলো বইকে কেবল পর্দাবৃত রত্নহাতে ম্যাজিশিয়ানের মুখের বুলির মত শোনাবে। ঢাউস কিতাবটি দীর্ঘমেয়াদে পড়ে বিজ্ঞ-সচেতন পাঠকদের কেউ পারবে এর মূল্যায়ন করতে। আমরা কেবল কলেবর না ছুঁয়ে ধারণাই দিতে পারি৷ সিন্ধু থেকে বঙ্গ বইটি শেকড় থেকে সূচিত হয়ে সিন্ধুবিজয়, গজনি-ঘুর বংশ, তুর্কি সালতানাত, খিলজি-তুঘলক হয়ে দিল্লীর উত্থান-পতনের গল্প; প্রথম খন্ড থেমেছে ইলিয়াস শাহির বংশের গৌরবগাঁথা বলে। এর মাঝে এসেছে সালতানাতগুলোর পতনের নেপথ্যকারণ, প্রাচীন উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, ওলী-আউলিয়া সুফীদের জীবন, প্রাচীন হিন্দের সমাজ ও সংস্কৃতিসহ বহু খণ্ডবিষয়। দ্বিতীয় খণ্ড সজ্জিত হয়েছে মুঘল সাম্রাজ্যের আদি-অন্ত নিয়ে। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হওয়া এই সালতানাত ১৮৫৭ তে শেষ হয়েছে; বক্ষমাণ বইটিও শেষ হয়েছে সেখানেই। কৈফিয়ত ও আশাবাদ শিরোনামে লেখক মনযুর আহমাদ বলেছেন বইয়ের প্রেক্ষাপটের গল্প। চিরাচরিত নীতিতে নিজেকে তুচ্ছতম ও অযোগ্য বলেছেন; আমরা বলতে চাই, রচিত বইটি লেখকের অযোগ্যতার প্রশ্নে বিদ্রোহ ঘোষণা করুক। একজন নিষ্ঠাবান লেখকের পরিচয়পত্র হিসেবে তাঁর বই-ই যথার্থ। ইতিহাস নিয়ে সুন্দর সাবলীল এক বিশ্লেষণ চলে এসেছে ভূমিকায়। ঐতিহাসিকদের ধারাবাহিকতাকে একসুতোয় গেঁথেছেন বরেণ্য কবি ও দার্শনিক মুসা আল হাফিজ। নান্দনিক মলাট খুলে এক শুভসূচনার পর পাঠক হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অতল গহ্বরে। বইয়ের সামগ্রিকতা কত গভীর! নিপুণতা কত সুদক্ষ, প্রয়োজনীয়তা কত বিস্তর, কার্যকারীতা কত দীর্ঘ— তা কেবল বই জানিয়ে দিবে। আমরা কেবল অমূল্য কলেবরটি ছোঁয়ার প্রতিক্ষায় প্রহর কাটাতে পারি। বিদগ্ধ সাহিত্যিক ও কলামিস্ট মনযুর আহমাদ হৃদয়ের ব্যাকুল প্রশ্নে খুঁজেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে মুসলিমদের বহুসংখ্যতার নেপথ্য। সংকটাচ্ছন্ন আত্মপরিচয়কে জানতে চেয়েছেন ইতিহাসের অলিগলিতে। ঘুরেছেন দিল্লির সালতানাতে, মুঘল হেরেমে, পীর আউলিয়াদের মুসাফিরখানায়, শাহজাদাদের কূটনৈতিক রণাঙ্গনে, আদিম কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে। খুঁজে পেয়েছেন ইতিহাসের মুক্তো, সাজিয়ে পরিবেশন করেছেন আমাদের বিপর্যাস চিন্তার দস্তরখানে। অনুবাদসাহিত্যের জোয়ারে ভাসমান প্রকাশনাশিল্পের মাঝে চেতনার হাত ধরে আমরা পেলাম কচকচে মৌলিক। একরোখা সমাজকে জাগিয়ে দিক এই নবচেতনার বিচ্ছুরণ।বইটির পাঠকশ্রেণী কারা! এর জবাবে 'আত্মপরিচয়সন্ধানী' যথার্থ শব্দ হতে পারে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা শিক্ষার্থী, সাধারণ মুসলিম যুবক-তরুণ কিংবা ইতিহাসপ্রেমী— সবার জন্য বইটি বিভিন্ন উপাদানে বর্ণাঢ্য প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয়। লেখকের ভাষার সাবলীলতা আর ছোট ছোট বাক্যে বর্ণাঢ্য শব্দসাজ— ইতিহাসের আলোচিত 'শব্দযন্ত্রণাকে' নিঃশেষ করেছে। লেখকের দীর্ঘকাল লেখালেখির সুবাদে পাঠকদের হৃদয়ে তৈরী হওয়া আস্থা সুদৃঢ় হয়ে গ্রহণ করুক বইটি; এই কামনাই করব।
An Najahah Shop
Category List
All products

ইতিহাস এমন এক ভেলা— যাতে ভেসে আবিস্কার করা যায় নিজেকে। ইতিহাসবিমুখ জাতি তাই আত্মপরিচয়ের সংকটে কালের উচ্ছিষ্ট হয়ে বেঁচে থাকে। সময় তাদের সঙ্গ দেয় না। জীবন তাদের শোনায় না সাফল্যগাঁথা। শতাব্দী তার পাতায় লিখে না তাদের নাম। ইতিহাস শব্দটিকে বিভিন্ন ব্যখ্যা করা যায়; বস্তুত ইতিহাস তো নিজেকে দেখতে— সময়ের দর্পণ।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইতিহাস অজস্র ঘূর্ণিপাক খেয়েছে, বাঁক নিয়েছে নানাসময় নানাদিকে। মুসলমানদের উত্থান-পতনের হিসেবনিকেশ নানাজন ব্যাখ্যা করেছে নানাভাবে। কারো কলম আশ্রয় দিয়েছে তো কারো কলম ক্ষতবিক্ষত করেছে কাগজকে; হৃদয়কে। হাজার বছরের এই ইতিহাসকে একজন আস্থাশীল লেখকের কলম হয়ে মলাটবদ্ধাকারে হাতে পাওয়া— বস্তত জাতিগতভাবে বাঙালি মুসলিমদের সৌভাগ্য বটে। এ ধরণের বই পড়ে আত্মগৌরবে বিভোরিত উৎসবমুখর তরুণরা নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে দু’চারলাইন বলতে শিখবে, ভাবতে শিখবে আগত নব ইতিহাস রচনার প্রেক্ষাপট।
বইয়ের সূচিপত্র দেখে দু’চার কথা বলে দিলেও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে রয়ে যায় দায়বদ্ধতা। এই ভাসা ভাসা কথাগুলো বইকে কেবল পর্দাবৃত রত্নহাতে ম্যাজিশিয়ানের মুখের বুলির মত শোনাবে। ঢাউস কিতাবটি দীর্ঘমেয়াদে পড়ে বিজ্ঞ-সচেতন পাঠকদের কেউ পারবে এর মূল্যায়ন করতে। আমরা কেবল কলেবর না ছুঁয়ে ধারণাই দিতে পারি৷ সিন্ধু থেকে বঙ্গ বইটি শেকড় থেকে সূচিত হয়ে সিন্ধুবিজয়, গজনি-ঘুর বংশ, তুর্কি সালতানাত, খিলজি-তুঘলক হয়ে দিল্লীর উত্থান-পতনের গল্প; প্রথম খন্ড থেমেছে ইলিয়াস শাহির বংশের গৌরবগাঁথা বলে। এর মাঝে এসেছে সালতানাতগুলোর পতনের নেপথ্যকারণ, প্রাচীন উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, ওলী-আউলিয়া সুফীদের জীবন, প্রাচীন হিন্দের সমাজ ও সংস্কৃতিসহ বহু খণ্ডবিষয়। দ্বিতীয় খণ্ড সজ্জিত হয়েছে মুঘল সাম্রাজ্যের আদি-অন্ত নিয়ে। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হওয়া এই সালতানাত ১৮৫৭ তে শেষ হয়েছে; বক্ষমাণ বইটিও শেষ হয়েছে সেখানেই।
কৈফিয়ত ও আশাবাদ শিরোনামে লেখক মনযুর আহমাদ বলেছেন বইয়ের প্রেক্ষাপটের গল্প। চিরাচরিত নীতিতে নিজেকে তুচ্ছতম ও অযোগ্য বলেছেন; আমরা বলতে চাই, রচিত বইটি লেখকের অযোগ্যতার প্রশ্নে বিদ্রোহ ঘোষণা করুক। একজন নিষ্ঠাবান লেখকের পরিচয়পত্র হিসেবে তাঁর বই-ই যথার্থ। ইতিহাস নিয়ে সুন্দর সাবলীল এক বিশ্লেষণ চলে এসেছে ভূমিকায়। ঐতিহাসিকদের ধারাবাহিকতাকে একসুতোয় গেঁথেছেন বরেণ্য কবি ও দার্শনিক মুসা আল হাফিজ। নান্দনিক মলাট খুলে এক শুভসূচনার পর পাঠক হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অতল গহ্বরে।
বইয়ের সামগ্রিকতা কত গভীর! নিপুণতা কত সুদক্ষ, প্রয়োজনীয়তা কত বিস্তর, কার্যকারীতা কত দীর্ঘ— তা কেবল বই জানিয়ে দিবে। আমরা কেবল অমূল্য কলেবরটি ছোঁয়ার প্রতিক্ষায় প্রহর কাটাতে পারি। বিদগ্ধ সাহিত্যিক ও কলামিস্ট মনযুর আহমাদ হৃদয়ের ব্যাকুল প্রশ্নে খুঁজেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে মুসলিমদের বহুসংখ্যতার নেপথ্য। সংকটাচ্ছন্ন আত্মপরিচয়কে জানতে চেয়েছেন ইতিহাসের অলিগলিতে। ঘুরেছেন দিল্লির সালতানাতে, মুঘল হেরেমে, পীর আউলিয়াদের মুসাফিরখানায়, শাহজাদাদের কূটনৈতিক রণাঙ্গনে, আদিম কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে। খুঁজে পেয়েছেন ইতিহাসের মুক্তো, সাজিয়ে পরিবেশন করেছেন আমাদের বিপর্যাস চিন্তার দস্তরখানে। অনুবাদসাহিত্যের জোয়ারে ভাসমান প্রকাশনাশিল্পের মাঝে চেতনার হাত ধরে আমরা পেলাম কচকচে মৌলিক। একরোখা সমাজকে জাগিয়ে দিক এই নবচেতনার বিচ্ছুরণ।
বইটির পাঠকশ্রেণী কারা! এর জবাবে 'আত্মপরিচয়সন্ধানী' যথার্থ শব্দ হতে পারে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা শিক্ষার্থী, সাধারণ মুসলিম যুবক-তরুণ কিংবা ইতিহাসপ্রেমী— সবার জন্য বইটি বিভিন্ন উপাদানে বর্ণাঢ্য প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয়। লেখকের ভাষার সাবলীলতা আর ছোট ছোট বাক্যে বর্ণাঢ্য শব্দসাজ— ইতিহাসের আলোচিত 'শব্দযন্ত্রণাকে' নিঃশেষ করেছে। লেখকের দীর্ঘকাল লেখালেখির সুবাদে পাঠকদের হৃদয়ে তৈরী হওয়া আস্থা সুদৃঢ় হয়ে গ্রহণ করুক বইটি; এই কামনাই করব।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইতিহাস অজস্র ঘূর্ণিপাক খেয়েছে, বাঁক নিয়েছে নানাসময় নানাদিকে। মুসলমানদের উত্থান-পতনের হিসেবনিকেশ নানাজন ব্যাখ্যা করেছে নানাভাবে। কারো কলম আশ্রয় দিয়েছে তো কারো কলম ক্ষতবিক্ষত করেছে কাগজকে; হৃদয়কে। হাজার বছরের এই ইতিহাসকে একজন আস্থাশীল লেখকের কলম হয়ে মলাটবদ্ধাকারে হাতে পাওয়া— বস্তত জাতিগতভাবে বাঙালি মুসলিমদের সৌভাগ্য বটে। এ ধরণের বই পড়ে আত্মগৌরবে বিভোরিত উৎসবমুখর তরুণরা নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে দু’চারলাইন বলতে শিখবে, ভাবতে শিখবে আগত নব ইতিহাস রচনার প্রেক্ষাপট।
বইয়ের সূচিপত্র দেখে দু’চার কথা বলে দিলেও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে রয়ে যায় দায়বদ্ধতা। এই ভাসা ভাসা কথাগুলো বইকে কেবল পর্দাবৃত রত্নহাতে ম্যাজিশিয়ানের মুখের বুলির মত শোনাবে। ঢাউস কিতাবটি দীর্ঘমেয়াদে পড়ে বিজ্ঞ-সচেতন পাঠকদের কেউ পারবে এর মূল্যায়ন করতে। আমরা কেবল কলেবর না ছুঁয়ে ধারণাই দিতে পারি৷ সিন্ধু থেকে বঙ্গ বইটি শেকড় থেকে সূচিত হয়ে সিন্ধুবিজয়, গজনি-ঘুর বংশ, তুর্কি সালতানাত, খিলজি-তুঘলক হয়ে দিল্লীর উত্থান-পতনের গল্প; প্রথম খন্ড থেমেছে ইলিয়াস শাহির বংশের গৌরবগাঁথা বলে। এর মাঝে এসেছে সালতানাতগুলোর পতনের নেপথ্যকারণ, প্রাচীন উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, ওলী-আউলিয়া সুফীদের জীবন, প্রাচীন হিন্দের সমাজ ও সংস্কৃতিসহ বহু খণ্ডবিষয়। দ্বিতীয় খণ্ড সজ্জিত হয়েছে মুঘল সাম্রাজ্যের আদি-অন্ত নিয়ে। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হওয়া এই সালতানাত ১৮৫৭ তে শেষ হয়েছে; বক্ষমাণ বইটিও শেষ হয়েছে সেখানেই।
কৈফিয়ত ও আশাবাদ শিরোনামে লেখক মনযুর আহমাদ বলেছেন বইয়ের প্রেক্ষাপটের গল্প। চিরাচরিত নীতিতে নিজেকে তুচ্ছতম ও অযোগ্য বলেছেন; আমরা বলতে চাই, রচিত বইটি লেখকের অযোগ্যতার প্রশ্নে বিদ্রোহ ঘোষণা করুক। একজন নিষ্ঠাবান লেখকের পরিচয়পত্র হিসেবে তাঁর বই-ই যথার্থ। ইতিহাস নিয়ে সুন্দর সাবলীল এক বিশ্লেষণ চলে এসেছে ভূমিকায়। ঐতিহাসিকদের ধারাবাহিকতাকে একসুতোয় গেঁথেছেন বরেণ্য কবি ও দার্শনিক মুসা আল হাফিজ। নান্দনিক মলাট খুলে এক শুভসূচনার পর পাঠক হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অতল গহ্বরে।
বইয়ের সামগ্রিকতা কত গভীর! নিপুণতা কত সুদক্ষ, প্রয়োজনীয়তা কত বিস্তর, কার্যকারীতা কত দীর্ঘ— তা কেবল বই জানিয়ে দিবে। আমরা কেবল অমূল্য কলেবরটি ছোঁয়ার প্রতিক্ষায় প্রহর কাটাতে পারি। বিদগ্ধ সাহিত্যিক ও কলামিস্ট মনযুর আহমাদ হৃদয়ের ব্যাকুল প্রশ্নে খুঁজেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে মুসলিমদের বহুসংখ্যতার নেপথ্য। সংকটাচ্ছন্ন আত্মপরিচয়কে জানতে চেয়েছেন ইতিহাসের অলিগলিতে। ঘুরেছেন দিল্লির সালতানাতে, মুঘল হেরেমে, পীর আউলিয়াদের মুসাফিরখানায়, শাহজাদাদের কূটনৈতিক রণাঙ্গনে, আদিম কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে। খুঁজে পেয়েছেন ইতিহাসের মুক্তো, সাজিয়ে পরিবেশন করেছেন আমাদের বিপর্যাস চিন্তার দস্তরখানে। অনুবাদসাহিত্যের জোয়ারে ভাসমান প্রকাশনাশিল্পের মাঝে চেতনার হাত ধরে আমরা পেলাম কচকচে মৌলিক। একরোখা সমাজকে জাগিয়ে দিক এই নবচেতনার বিচ্ছুরণ।
বইটির পাঠকশ্রেণী কারা! এর জবাবে 'আত্মপরিচয়সন্ধানী' যথার্থ শব্দ হতে পারে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা শিক্ষার্থী, সাধারণ মুসলিম যুবক-তরুণ কিংবা ইতিহাসপ্রেমী— সবার জন্য বইটি বিভিন্ন উপাদানে বর্ণাঢ্য প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয়। লেখকের ভাষার সাবলীলতা আর ছোট ছোট বাক্যে বর্ণাঢ্য শব্দসাজ— ইতিহাসের আলোচিত 'শব্দযন্ত্রণাকে' নিঃশেষ করেছে। লেখকের দীর্ঘকাল লেখালেখির সুবাদে পাঠকদের হৃদয়ে তৈরী হওয়া আস্থা সুদৃঢ় হয়ে গ্রহণ করুক বইটি; এই কামনাই করব।
সিন্ধু থেকে বঙ্গ ( 1ও 2)
720 BDT1,200 BDTSave 480 BDT
1
ইতিহাস এমন এক ভেলা— যাতে ভেসে আবিস্কার করা যায় নিজেকে। ইতিহাসবিমুখ জাতি তাই আত্মপরিচয়ের সংকটে কালের উচ্ছিষ্ট হয়ে বেঁচে থাকে। সময় তাদের সঙ্গ দেয় না। জীবন তাদের শোনায় না সাফল্যগাঁথা। শতাব্দী তার পাতায় লিখে না তাদের নাম। ইতিহাস শব্দটিকে বিভিন্ন ব্যখ্যা করা যায়; বস্তুত ইতিহাস তো নিজেকে দেখতে— সময়ের দর্পণ।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইতিহাস অজস্র ঘূর্ণিপাক খেয়েছে, বাঁক নিয়েছে নানাসময় নানাদিকে। মুসলমানদের উত্থান-পতনের হিসেবনিকেশ নানাজন ব্যাখ্যা করেছে নানাভাবে। কারো কলম আশ্রয় দিয়েছে তো কারো কলম ক্ষতবিক্ষত করেছে কাগজকে; হৃদয়কে। হাজার বছরের এই ইতিহাসকে একজন আস্থাশীল লেখকের কলম হয়ে মলাটবদ্ধাকারে হাতে পাওয়া— বস্তত জাতিগতভাবে বাঙালি মুসলিমদের সৌভাগ্য বটে। এ ধরণের বই পড়ে আত্মগৌরবে বিভোরিত উৎসবমুখর তরুণরা নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে দু’চারলাইন বলতে শিখবে, ভাবতে শিখবে আগত নব ইতিহাস রচনার প্রেক্ষাপট।
বইয়ের সূচিপত্র দেখে দু’চার কথা বলে দিলেও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে রয়ে যায় দায়বদ্ধতা। এই ভাসা ভাসা কথাগুলো বইকে কেবল পর্দাবৃত রত্নহাতে ম্যাজিশিয়ানের মুখের বুলির মত শোনাবে। ঢাউস কিতাবটি দীর্ঘমেয়াদে পড়ে বিজ্ঞ-সচেতন পাঠকদের কেউ পারবে এর মূল্যায়ন করতে। আমরা কেবল কলেবর না ছুঁয়ে ধারণাই দিতে পারি৷ সিন্ধু থেকে বঙ্গ বইটি শেকড় থেকে সূচিত হয়ে সিন্ধুবিজয়, গজনি-ঘুর বংশ, তুর্কি সালতানাত, খিলজি-তুঘলক হয়ে দিল্লীর উত্থান-পতনের গল্প; প্রথম খন্ড থেমেছে ইলিয়াস শাহির বংশের গৌরবগাঁথা বলে। এর মাঝে এসেছে সালতানাতগুলোর পতনের নেপথ্যকারণ, প্রাচীন উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, ওলী-আউলিয়া সুফীদের জীবন, প্রাচীন হিন্দের সমাজ ও সংস্কৃতিসহ বহু খণ্ডবিষয়। দ্বিতীয় খণ্ড সজ্জিত হয়েছে মুঘল সাম্রাজ্যের আদি-অন্ত নিয়ে। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হওয়া এই সালতানাত ১৮৫৭ তে শেষ হয়েছে; বক্ষমাণ বইটিও শেষ হয়েছে সেখানেই।
কৈফিয়ত ও আশাবাদ শিরোনামে লেখক মনযুর আহমাদ বলেছেন বইয়ের প্রেক্ষাপটের গল্প। চিরাচরিত নীতিতে নিজেকে তুচ্ছতম ও অযোগ্য বলেছেন; আমরা বলতে চাই, রচিত বইটি লেখকের অযোগ্যতার প্রশ্নে বিদ্রোহ ঘোষণা করুক। একজন নিষ্ঠাবান লেখকের পরিচয়পত্র হিসেবে তাঁর বই-ই যথার্থ। ইতিহাস নিয়ে সুন্দর সাবলীল এক বিশ্লেষণ চলে এসেছে ভূমিকায়। ঐতিহাসিকদের ধারাবাহিকতাকে একসুতোয় গেঁথেছেন বরেণ্য কবি ও দার্শনিক মুসা আল হাফিজ। নান্দনিক মলাট খুলে এক শুভসূচনার পর পাঠক হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অতল গহ্বরে।
বইয়ের সামগ্রিকতা কত গভীর! নিপুণতা কত সুদক্ষ, প্রয়োজনীয়তা কত বিস্তর, কার্যকারীতা কত দীর্ঘ— তা কেবল বই জানিয়ে দিবে। আমরা কেবল অমূল্য কলেবরটি ছোঁয়ার প্রতিক্ষায় প্রহর কাটাতে পারি। বিদগ্ধ সাহিত্যিক ও কলামিস্ট মনযুর আহমাদ হৃদয়ের ব্যাকুল প্রশ্নে খুঁজেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে মুসলিমদের বহুসংখ্যতার নেপথ্য। সংকটাচ্ছন্ন আত্মপরিচয়কে জানতে চেয়েছেন ইতিহাসের অলিগলিতে। ঘুরেছেন দিল্লির সালতানাতে, মুঘল হেরেমে, পীর আউলিয়াদের মুসাফিরখানায়, শাহজাদাদের কূটনৈতিক রণাঙ্গনে, আদিম কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে। খুঁজে পেয়েছেন ইতিহাসের মুক্তো, সাজিয়ে পরিবেশন করেছেন আমাদের বিপর্যাস চিন্তার দস্তরখানে। অনুবাদসাহিত্যের জোয়ারে ভাসমান প্রকাশনাশিল্পের মাঝে চেতনার হাত ধরে আমরা পেলাম কচকচে মৌলিক। একরোখা সমাজকে জাগিয়ে দিক এই নবচেতনার বিচ্ছুরণ।
বইটির পাঠকশ্রেণী কারা! এর জবাবে 'আত্মপরিচয়সন্ধানী' যথার্থ শব্দ হতে পারে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা শিক্ষার্থী, সাধারণ মুসলিম যুবক-তরুণ কিংবা ইতিহাসপ্রেমী— সবার জন্য বইটি বিভিন্ন উপাদানে বর্ণাঢ্য প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয়। লেখকের ভাষার সাবলীলতা আর ছোট ছোট বাক্যে বর্ণাঢ্য শব্দসাজ— ইতিহাসের আলোচিত 'শব্দযন্ত্রণাকে' নিঃশেষ করেছে। লেখকের দীর্ঘকাল লেখালেখির সুবাদে পাঠকদের হৃদয়ে তৈরী হওয়া আস্থা সুদৃঢ় হয়ে গ্রহণ করুক বইটি; এই কামনাই করব।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইতিহাস অজস্র ঘূর্ণিপাক খেয়েছে, বাঁক নিয়েছে নানাসময় নানাদিকে। মুসলমানদের উত্থান-পতনের হিসেবনিকেশ নানাজন ব্যাখ্যা করেছে নানাভাবে। কারো কলম আশ্রয় দিয়েছে তো কারো কলম ক্ষতবিক্ষত করেছে কাগজকে; হৃদয়কে। হাজার বছরের এই ইতিহাসকে একজন আস্থাশীল লেখকের কলম হয়ে মলাটবদ্ধাকারে হাতে পাওয়া— বস্তত জাতিগতভাবে বাঙালি মুসলিমদের সৌভাগ্য বটে। এ ধরণের বই পড়ে আত্মগৌরবে বিভোরিত উৎসবমুখর তরুণরা নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে দু’চারলাইন বলতে শিখবে, ভাবতে শিখবে আগত নব ইতিহাস রচনার প্রেক্ষাপট।
বইয়ের সূচিপত্র দেখে দু’চার কথা বলে দিলেও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে রয়ে যায় দায়বদ্ধতা। এই ভাসা ভাসা কথাগুলো বইকে কেবল পর্দাবৃত রত্নহাতে ম্যাজিশিয়ানের মুখের বুলির মত শোনাবে। ঢাউস কিতাবটি দীর্ঘমেয়াদে পড়ে বিজ্ঞ-সচেতন পাঠকদের কেউ পারবে এর মূল্যায়ন করতে। আমরা কেবল কলেবর না ছুঁয়ে ধারণাই দিতে পারি৷ সিন্ধু থেকে বঙ্গ বইটি শেকড় থেকে সূচিত হয়ে সিন্ধুবিজয়, গজনি-ঘুর বংশ, তুর্কি সালতানাত, খিলজি-তুঘলক হয়ে দিল্লীর উত্থান-পতনের গল্প; প্রথম খন্ড থেমেছে ইলিয়াস শাহির বংশের গৌরবগাঁথা বলে। এর মাঝে এসেছে সালতানাতগুলোর পতনের নেপথ্যকারণ, প্রাচীন উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, ওলী-আউলিয়া সুফীদের জীবন, প্রাচীন হিন্দের সমাজ ও সংস্কৃতিসহ বহু খণ্ডবিষয়। দ্বিতীয় খণ্ড সজ্জিত হয়েছে মুঘল সাম্রাজ্যের আদি-অন্ত নিয়ে। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হওয়া এই সালতানাত ১৮৫৭ তে শেষ হয়েছে; বক্ষমাণ বইটিও শেষ হয়েছে সেখানেই।
কৈফিয়ত ও আশাবাদ শিরোনামে লেখক মনযুর আহমাদ বলেছেন বইয়ের প্রেক্ষাপটের গল্প। চিরাচরিত নীতিতে নিজেকে তুচ্ছতম ও অযোগ্য বলেছেন; আমরা বলতে চাই, রচিত বইটি লেখকের অযোগ্যতার প্রশ্নে বিদ্রোহ ঘোষণা করুক। একজন নিষ্ঠাবান লেখকের পরিচয়পত্র হিসেবে তাঁর বই-ই যথার্থ। ইতিহাস নিয়ে সুন্দর সাবলীল এক বিশ্লেষণ চলে এসেছে ভূমিকায়। ঐতিহাসিকদের ধারাবাহিকতাকে একসুতোয় গেঁথেছেন বরেণ্য কবি ও দার্শনিক মুসা আল হাফিজ। নান্দনিক মলাট খুলে এক শুভসূচনার পর পাঠক হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অতল গহ্বরে।
বইয়ের সামগ্রিকতা কত গভীর! নিপুণতা কত সুদক্ষ, প্রয়োজনীয়তা কত বিস্তর, কার্যকারীতা কত দীর্ঘ— তা কেবল বই জানিয়ে দিবে। আমরা কেবল অমূল্য কলেবরটি ছোঁয়ার প্রতিক্ষায় প্রহর কাটাতে পারি। বিদগ্ধ সাহিত্যিক ও কলামিস্ট মনযুর আহমাদ হৃদয়ের ব্যাকুল প্রশ্নে খুঁজেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে মুসলিমদের বহুসংখ্যতার নেপথ্য। সংকটাচ্ছন্ন আত্মপরিচয়কে জানতে চেয়েছেন ইতিহাসের অলিগলিতে। ঘুরেছেন দিল্লির সালতানাতে, মুঘল হেরেমে, পীর আউলিয়াদের মুসাফিরখানায়, শাহজাদাদের কূটনৈতিক রণাঙ্গনে, আদিম কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে। খুঁজে পেয়েছেন ইতিহাসের মুক্তো, সাজিয়ে পরিবেশন করেছেন আমাদের বিপর্যাস চিন্তার দস্তরখানে। অনুবাদসাহিত্যের জোয়ারে ভাসমান প্রকাশনাশিল্পের মাঝে চেতনার হাত ধরে আমরা পেলাম কচকচে মৌলিক। একরোখা সমাজকে জাগিয়ে দিক এই নবচেতনার বিচ্ছুরণ।
বইটির পাঠকশ্রেণী কারা! এর জবাবে 'আত্মপরিচয়সন্ধানী' যথার্থ শব্দ হতে পারে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা শিক্ষার্থী, সাধারণ মুসলিম যুবক-তরুণ কিংবা ইতিহাসপ্রেমী— সবার জন্য বইটি বিভিন্ন উপাদানে বর্ণাঢ্য প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয়। লেখকের ভাষার সাবলীলতা আর ছোট ছোট বাক্যে বর্ণাঢ্য শব্দসাজ— ইতিহাসের আলোচিত 'শব্দযন্ত্রণাকে' নিঃশেষ করেছে। লেখকের দীর্ঘকাল লেখালেখির সুবাদে পাঠকদের হৃদয়ে তৈরী হওয়া আস্থা সুদৃঢ় হয়ে গ্রহণ করুক বইটি; এই কামনাই করব।