An Najahah Shop
EN

মুরিদপুরের পীর

An Najahah Shop

মুরিদপুরের পীর
  • মুরিদপুরের পীর_img_0

মুরিদপুরের পীর

95 BDT160 BDTSave 65 BDT
1

বইঃ মুরিদপুরের পীর
লেখকঃ ইমরান রাইহান
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৩৬
ধরণঃ রম্য গল্প
প্রকাশনীঃ চেতনা প্রকাশন


মুরিদপুরের পীর আসলে কাদের কথা বলে? মুরিদপুরের পীর বইয়ের সবাই মুরিদ আবার সবাই-ই পীর। অর্থাৎ জোচ্চুরি-বাটপারি-চাটুকারিতা এই বইয়ের মূল শক্তি। গল্পগুলোয় কথক গলাবাজি করে ন্যয় অন্যায়ের সীমারেখা উল্টে-পাল্টে দিয়ে ব্যঙ্গের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। মূর্খতা বা বাটপারি এসব নিয়েই এখনকার সমাজ চলছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরাসরি এগুলোকে কেউ ভালো বলবে না। বইয়ে এই ব্যাপারগুলোকে বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিমায় প্রকাশ করে দারুণ রস সৃষ্টি করেছেন লেখক।

মোট চব্বিশটা গল্প রয়েছে এ বইয়ে। সবগুলা গল্প নিয়ে আলোচনা করা তো সম্ভব না। তথাপি বইটা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দানে কয়েকটা গল্প নিয়ে আলাপ করছি।

প্রথম গল্প “গবগব সাহিত্য সভা”তে গুজরাটের সাহিত্যিক গবগব ঘড়িয়ালবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় কথককে দাওয়াত করা হয়। কিন্তু তিনি ওজর দেন, আমি তো গুজরাটি জানি না। এর উত্তরে তারালাল তাকে বলে, “আজকাল সবচেয়ে ভালো আলোচনা তারাই করেন যারা আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এই তো কিছুদিন আগেও বুরুকি সাহেব ইকবালের কবিতার উপর শানদার বক্তব্য রাখেন এবং বক্তৃতা শেষে স্বীকার করেন, তিনি ইকবালের কোনো বই-ই পড়েননি।” আরেক ম্যাডাম ভিকারুননিসা নুন ইকবাল আর নজরুলের উপর বক্তৃতা করবেন কিন্তু তিনি উর্দু-বাংলা কোনো ভাষাই জানেন না। বুঝা যাচ্ছে গল্পটা কোন দিকে ইঙ্গিত করছে। তা ছাড়া পরবর্তী কাহিনি এরচেয়েও বেশি হাস্যকর।

পরবর্তী গল্প “হোস্টেল”এ আমরা এক ফাকিবাজ তরুণের সাক্ষাত পাবো। যে কি না কয়েকবারের চেষ্টায় এন্ট্রান্স পরিক্ষা পাশ করায় পরিবারের ধারণা হয়, সে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। সেই চিন্তায় সে যেতে চায় বিলেতে কিন্তু তার বাবা তাকে পাঠায় লাহোরে। সে লাহোরে গিয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে নাগরালিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দেখা যায় আট আট বার বিএ পরিক্ষা দিয়েও ফেল মারে সে। গল্পের উপস্থাপন আর বর্ণনা ভঙ্গি অসাধারণ।

“নভেল ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড” আরেকটা মজার জিনিস। এই গল্পে বর্তমান সাহিত্যের অচল ধারাটাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। একই প্লট চরিত্র আর স্থান পরিবর্তন করে চালিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটাকে বিদ্রুপ করে গল্পে লেখক বলছেন, “আমাদের কোম্পানিতে সম্পূর্ণ অটোমেশিনের সাহায্যে উপন্যাস প্রস্তুত করা হয়, হাতের ছোঁয়া লাগার কোনো প্রশ্নই আসে না।” আরেকটু সামনে বেড়ে আরো তীর্যকভাবেই বলছেন, “প্রতিটি জনরার জন্য আমাদের নিজস্ব কিছু প্লট তৈরি আছে। অর্ডার পেলে সেই ছাঁচে টাটকা গরম উপন্যাস সরবরাহ করি আমরা। অবশ্য অর্ডার নেওয়ার সময় চরিত্রের নাম, সময়কাল ও স্থান জেনে নিই, ফলে সামান্য চেহারা বদলে এক কুমির সাতবার দেখাতে কোনো সমস্যাই হয় না।”

“দক্ষতা” গল্পে লেখক যে রস সৃষ্টি করেছেন তা এরমধ্যেই বিভিন্ন বইয়ের গ্রুপে ছড়িয়ে পড়েছে। এই গল্পে দেখানো হয়েছে দক্ষতা আসলে গলাবাজি, মস্তানি এগুলোই। শিক্ষাব্যবস্থাকে বিদ্রুপ করছে, “দেশে এখন পড়ালেখা আছে নাকি? স্কুলের চেয়ে কোচিং-এ ভালো পড়াশোনা হয়। এটা জেনে সে চেষ্টা করেছিল কোচিং-এ ভর্তি হতে। কিন্তু স্কুলের ছাত্র না হলে আবার কোচিং-এ ভর্তি নেয় না। কী এক অদ্ভুত সমস্যা বলো দেখি। কোচিং-এ না পড়লে স্কুলের পড়াশোনা আদায় হয় না, আবার স্কুলে ভর্তি না হলে কোচিং-এ ভর্তি নেয় না। এসব দেখে শরিফ ক্ষিপ্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত নেয় এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে সে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা আর হয়নি। সে পড়ালেখা করেছে প্রকৃতির কাছে। আলো বাতাসের কাছে। সে হয়ে উঠেছে প্রকৃতির সন্তান।”

অন্যান্য গল্পগুলোতেও পাঠক একইরকম মজা পাবেন। নিশ্চিতভাবেই নতুন একটা স্বাদ লেখক আমাদেরকে দিয়েছেন এই বইয়ের মাধ্যমে। আশা করি, এই ধারায় আরো সংকলন তিনি আনবেন।