দু'আ কবুলের গল্পগুলো ৩
বই : দু'আ কবুলের গল্পগুলো ৩আযান প্রকাশনীমূদ্রিত মূল্য 280 টাকাদু'আ কবুলের গল্পগুলো ৩ বই থেকেবিয়ের তেরো বছর পর যেদিন প্রথম কন্যাসন্তান দুনিয়ার আলো দেখলো সেদিন তাদের আনন্দের কোনো সীমা পরিসীমা ছিল না। কন্যার বাবা পেশায় একজন আর্মি অফিসার। সন্তান পেটে আসার পর থেকে বাচ্চার মা সিএমএইচে সর্বোচ্চ কেয়ার পেয়েছিলেন। সম্পূর্ণ সুস্থ বাচ্চা ভুমিষ্ট হওয়ার পর তাই কেউ কল্পনাও করতে পারেনি এক ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার আধাঘন্টা পর হঠাৎ বাচ্চার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন দেওয়া হলো। কোনো লাভ হলো না। একঘন্টা পর সরাসরি ভেন্টিলেশনে। বাচ্চা অক্সিজেনও নিতে পারছে না। মাত্র আধাঘন্টার ব্যবধানে পুরো পরিবারের মাথায় আসমান ভেঙে পড়লো। স্কয়ার হাসপাতালের মতো এতো বড় হাসপাতালের ডাক্তারদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ দেখা গেলো। বিভিন্ন টেস্ট করার পর বিজ্ঞ ডাক্তাররা ফুসফুসের এমন একটি রোগের আশংকা করলেন, যেটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সচারাচর দেখা যায় না এবং অনেকে ক্ষেত্রে এর কোনো চিকিৎসাই নেই। মৃত্যুই এর শেষ পরিণতি।প্রিয় পাঠক! একবার কল্পনা করুন বাচ্চার বাবা-মার মনের অবস্থা কেমন ছিলো সেদিন। দীর্ঘ তের বছর পর আল্লাহ তায়ালা একটি কন্যাসন্তান দিলেন, আবার জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তাকে রেখেও দিলেন। বাচ্চার মা এখনো তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারেনি। বাবা পারেননি কলিজার টুকরোটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে। কাঁদতে কাঁদতে সবার এখন বেহুশ হবার দশা। প্রফেসর হামিদুর রহমান। আল্লাহর এক নেককার বান্দা। বাচ্চার বাবার নিকটতম আত্মীয়। তার কাছে পরামর্শ চাওয়া হলো। সবকিছু শুনে তিনি হাসপাতালে ছুটে চলে এলেন। সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ। দুজনের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারেন না। বয়সের ভাড়ে কথাবার্তাও অস্পষ্ট। হাসপাতালে এসে মেয়ের বাবাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, “এখনই ওযু করে দু’রাকাত সলাত আদায় করে নাও। সলাত শেষে আল্লাহর সাথে কথা বলো। দু'চোখের পানি ঝরাও। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলো, ইয়া আল্লাহ! আমার মেয়েটাকে সুস্থ করে দেন।”মেয়ের বাবা বুঝতে পারলেন তার এখন করণীয় কী। বাইরে থেকে দেখে তাকে যতই শক্ত মনে হোক না কেনো, ভেতরে ভেতরে অত্যন্ত নরম দিলের মানুষ তিনি। প্রফেসর সাহেবের কথাটি তিনি পুরোপুরি আমলে নিলেন।ওযু করে এসে সলাত আদায় করলেন। চোখের পানি ফেলে আকুল গলায় দুআ করলেন। এতক্ষণের আহাজারি ছিলো দুঃখ কষ্ট আর হতাশার। আর এখনকার দু'আমিশ্রিত কান্নাগুলো পৌঁছে যাচ্ছে সরাসরি রবের দরবারে আশা-ভরসার নিরিখে। বাচ্চার দাদী সৌদি আরবের এক লোকের কাছে নাতনীর জন্য লাখ টাকার অলংকার আনার জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলে দিলেন, "অলংকার লাগবে না। পুরো টাকা হারামের গরীব লোকজনের মাঝে সদাকাহ করে দাও।"এদিকে বাচ্চার যায় যায় অবস্থা। ডাক্তাররা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। হয়তো আজকের রাতটাই শিশুর শেষ রাত। ফুসফুসের সমস্যার পাশাপাশি তারা বাচ্চার ব্লাডে ইনফেকশন এবং হার্টে ছিদ্রও পেয়েছেন। সামান্য সময়ের জন্য ভেন্টিলেশন খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাচ্চা অক্সিজেনের অভাবে কষ্টে লাফাতে শুরু করলে সাথে সাথে আবার ভেন্টিলেশনে দিয়ে দেওয়া হয়।বাচ্চার বাবা আশা হারালেন না। প্রফেসর সাহেবের সেই ছোট্ট কথা -“আপনি আপনার আল্লাহর সাথে কথা বলেন।” - এটাই তার একমাত্র পুঁজি। তিনি আল্লাহর সাথে নিভৃতে কথা চালিয়ে গেলেন।এভাবে পার হয়ে যায় একটি সপ্তাহ। বাচ্চাটি তখনও জীবিত।গত পরশুর আগের দিন। সুখবর আসার দিন। ডাক্তাররা জানালেন আজকের পরীক্ষায় বাচ্চার হার্টে ছিদ্র পাননি। এটা মিশে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর তারা জানান ব্লাডের যে ইনফেকশনটা ছিল, সেটাও কমে এসেছে। কিন্তু ফুসফুসের সমস্যা? যেটার কোন চিকিৎসা নেই, সেটার কী হবে?বর্তমান সময়ে করোনা পরিস্থিতিতে যারা সবচেয়ে নাম করেছেন, তাদের মধ্যেকার একজন কার্ডিওলজিস্ট আসলেন। আর্মির ব্রিগেডিয়ার তিনি। আজকের রিপোর্ট দেখে তিনি বললেন, "বাচ্চার ফুসফুসে এই মুহূর্তে কিছু শ্যাডো দেখা যাচ্ছে, যেটা কফের কারণে হতে পারে এবং এটা নিরাময়যোগ্য।"এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না যে, এতোগুলো বিজ্ঞ ডাক্তারদের এক্সরে ও ইসিজিসহ এতো এতো টেস্টের পরেও ফুসফুসের শ্যাডো যে কফের কারণে, এটা রিপোর্টে আসবে না। বরং এখানে অবশ্যই আরশের রবের কুদরতের কারিশমা আছে, যা বান্দার ক্যালকুলেশনের সম্পূর্ণ বাইরের বিষয়। আজ সকালে মক্কার একটি রেস্টুরেন্টে আমরা যখন নাস্তা করছিলাম, শেষ খবর পেলাম বাচ্চার ভেন্টিলেশন খুলে নেয়া হয়েছে। এখন আর খুব বেশী অক্সিজেন লাগছে না। দু-একদিনের ভেতর সেটারও আর প্রয়োজন হবে না, ইন শা আল্লাহ।দুআ আর সদকা যে কী করতে পারে, একজন দুর্বল বান্দার জন্য তার মাবুদই যে যথেষ্ট, কীসের থেকে কী যে ঘটে যেতে পারে - তার চাক্ষুস প্রমাণ এই ঘটনা। নিশ্চয়ই আমার রব যদি অপ্রত্যাশিতভাবে বিপদে ফেলতে পারেন, তিনি কল্পনাতীতভাবে সেখান থেকে উদ্ধারও করতে পারেন। নিশ্চয়ই তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। সর্বাবস্থায়, সর্বক্ষেত্রে।
An Najahah Shop
Category List
All products

বই : দু'আ কবুলের গল্পগুলো ৩
আযান প্রকাশনী
মূদ্রিত মূল্য 280 টাকা
দু'আ কবুলের গল্পগুলো ৩ বই থেকে
বিয়ের তেরো বছর পর যেদিন প্রথম কন্যাসন্তান দুনিয়ার আলো দেখলো সেদিন তাদের আনন্দের কোনো সীমা পরিসীমা ছিল না। কন্যার বাবা পেশায় একজন আর্মি অফিসার। সন্তান পেটে আসার পর থেকে বাচ্চার মা সিএমএইচে সর্বোচ্চ কেয়ার পেয়েছিলেন। সম্পূর্ণ সুস্থ বাচ্চা ভুমিষ্ট হওয়ার পর তাই কেউ কল্পনাও করতে পারেনি এক ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার আধাঘন্টা পর হঠাৎ বাচ্চার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন দেওয়া হলো। কোনো লাভ হলো না। একঘন্টা পর সরাসরি ভেন্টিলেশনে। বাচ্চা অক্সিজেনও নিতে পারছে না। মাত্র আধাঘন্টার ব্যবধানে পুরো পরিবারের মাথায় আসমান ভেঙে পড়লো। স্কয়ার হাসপাতালের মতো এতো বড় হাসপাতালের ডাক্তারদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ দেখা গেলো। বিভিন্ন টেস্ট করার পর বিজ্ঞ ডাক্তাররা ফুসফুসের এমন একটি রোগের আশংকা করলেন, যেটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সচারাচর দেখা যায় না এবং অনেকে ক্ষেত্রে এর কোনো চিকিৎসাই নেই। মৃত্যুই এর শেষ পরিণতি।
প্রিয় পাঠক! একবার কল্পনা করুন বাচ্চার বাবা-মার মনের অবস্থা কেমন ছিলো সেদিন। দীর্ঘ তের বছর পর আল্লাহ তায়ালা একটি কন্যাসন্তান দিলেন, আবার জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তাকে রেখেও দিলেন। বাচ্চার মা এখনো তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারেনি। বাবা পারেননি কলিজার টুকরোটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে। কাঁদতে কাঁদতে সবার এখন বেহুশ হবার দশা।
প্রফেসর হামিদুর রহমান। আল্লাহর এক নেককার বান্দা। বাচ্চার বাবার নিকটতম আত্মীয়। তার কাছে পরামর্শ চাওয়া হলো। সবকিছু শুনে তিনি হাসপাতালে ছুটে চলে এলেন।
সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ। দুজনের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারেন না। বয়সের ভাড়ে কথাবার্তাও অস্পষ্ট। হাসপাতালে এসে মেয়ের বাবাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, “এখনই ওযু করে দু’রাকাত সলাত আদায় করে নাও। সলাত শেষে আল্লাহর সাথে কথা বলো। দু'চোখের পানি ঝরাও। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলো, ইয়া আল্লাহ! আমার মেয়েটাকে সুস্থ করে দেন।”
মেয়ের বাবা বুঝতে পারলেন তার এখন করণীয় কী। বাইরে থেকে দেখে তাকে যতই শক্ত মনে হোক না কেনো, ভেতরে ভেতরে অত্যন্ত নরম দিলের মানুষ তিনি। প্রফেসর সাহেবের কথাটি তিনি পুরোপুরি আমলে নিলেন।
ওযু করে এসে সলাত আদায় করলেন। চোখের পানি ফেলে আকুল গলায় দুআ করলেন। এতক্ষণের আহাজারি ছিলো দুঃখ কষ্ট আর হতাশার। আর এখনকার দু'আমিশ্রিত কান্নাগুলো পৌঁছে যাচ্ছে সরাসরি রবের দরবারে আশা-ভরসার নিরিখে।
বাচ্চার দাদী সৌদি আরবের এক লোকের কাছে নাতনীর জন্য লাখ টাকার অলংকার আনার জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলে দিলেন, "অলংকার লাগবে না। পুরো টাকা হারামের গরীব লোকজনের মাঝে সদাকাহ করে দাও।"
এদিকে বাচ্চার যায় যায় অবস্থা। ডাক্তাররা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। হয়তো আজকের রাতটাই শিশুর শেষ রাত। ফুসফুসের সমস্যার পাশাপাশি তারা বাচ্চার ব্লাডে ইনফেকশন এবং হার্টে ছিদ্রও পেয়েছেন। সামান্য সময়ের জন্য ভেন্টিলেশন খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাচ্চা অক্সিজেনের অভাবে কষ্টে লাফাতে শুরু করলে সাথে সাথে আবার ভেন্টিলেশনে দিয়ে দেওয়া হয়।
বাচ্চার বাবা আশা হারালেন না। প্রফেসর সাহেবের সেই ছোট্ট কথা -“আপনি আপনার আল্লাহর সাথে কথা বলেন।” - এটাই তার একমাত্র পুঁজি। তিনি আল্লাহর সাথে নিভৃতে কথা চালিয়ে গেলেন।
এভাবে পার হয়ে যায় একটি সপ্তাহ। বাচ্চাটি তখনও জীবিত।
গত পরশুর আগের দিন। সুখবর আসার দিন। ডাক্তাররা জানালেন আজকের পরীক্ষায় বাচ্চার হার্টে ছিদ্র পাননি। এটা মিশে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর তারা জানান ব্লাডের যে ইনফেকশনটা ছিল, সেটাও কমে এসেছে। কিন্তু ফুসফুসের সমস্যা? যেটার কোন চিকিৎসা নেই, সেটার কী হবে?
বর্তমান সময়ে করোনা পরিস্থিতিতে যারা সবচেয়ে নাম করেছেন, তাদের মধ্যেকার একজন কার্ডিওলজিস্ট আসলেন। আর্মির ব্রিগেডিয়ার তিনি। আজকের রিপোর্ট দেখে তিনি বললেন, "বাচ্চার ফুসফুসে এই মুহূর্তে কিছু শ্যাডো দেখা যাচ্ছে, যেটা কফের কারণে হতে পারে এবং এটা নিরাময়যোগ্য।"
এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না যে, এতোগুলো বিজ্ঞ ডাক্তারদের এক্সরে ও ইসিজিসহ এতো এতো টেস্টের পরেও ফুসফুসের শ্যাডো যে কফের কারণে, এটা রিপোর্টে আসবে না। বরং এখানে অবশ্যই আরশের রবের কুদরতের কারিশমা আছে, যা বান্দার ক্যালকুলেশনের সম্পূর্ণ বাইরের বিষয়।
আজ সকালে মক্কার একটি রেস্টুরেন্টে আমরা যখন নাস্তা করছিলাম, শেষ খবর পেলাম বাচ্চার ভেন্টিলেশন খুলে নেয়া হয়েছে। এখন আর খুব বেশী অক্সিজেন লাগছে না। দু-একদিনের ভেতর সেটারও আর প্রয়োজন হবে না, ইন শা আল্লাহ।
দুআ আর সদকা যে কী করতে পারে, একজন দুর্বল বান্দার জন্য তার মাবুদই যে যথেষ্ট, কীসের থেকে কী যে ঘটে যেতে পারে - তার চাক্ষুস প্রমাণ এই ঘটনা। নিশ্চয়ই আমার রব যদি অপ্রত্যাশিতভাবে বিপদে ফেলতে পারেন, তিনি কল্পনাতীতভাবে সেখান থেকে উদ্ধারও করতে পারেন।
নিশ্চয়ই তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। সর্বাবস্থায়, সর্বক্ষেত্রে।
আযান প্রকাশনী
মূদ্রিত মূল্য 280 টাকা
দু'আ কবুলের গল্পগুলো ৩ বই থেকে
বিয়ের তেরো বছর পর যেদিন প্রথম কন্যাসন্তান দুনিয়ার আলো দেখলো সেদিন তাদের আনন্দের কোনো সীমা পরিসীমা ছিল না। কন্যার বাবা পেশায় একজন আর্মি অফিসার। সন্তান পেটে আসার পর থেকে বাচ্চার মা সিএমএইচে সর্বোচ্চ কেয়ার পেয়েছিলেন। সম্পূর্ণ সুস্থ বাচ্চা ভুমিষ্ট হওয়ার পর তাই কেউ কল্পনাও করতে পারেনি এক ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার আধাঘন্টা পর হঠাৎ বাচ্চার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন দেওয়া হলো। কোনো লাভ হলো না। একঘন্টা পর সরাসরি ভেন্টিলেশনে। বাচ্চা অক্সিজেনও নিতে পারছে না। মাত্র আধাঘন্টার ব্যবধানে পুরো পরিবারের মাথায় আসমান ভেঙে পড়লো। স্কয়ার হাসপাতালের মতো এতো বড় হাসপাতালের ডাক্তারদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ দেখা গেলো। বিভিন্ন টেস্ট করার পর বিজ্ঞ ডাক্তাররা ফুসফুসের এমন একটি রোগের আশংকা করলেন, যেটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সচারাচর দেখা যায় না এবং অনেকে ক্ষেত্রে এর কোনো চিকিৎসাই নেই। মৃত্যুই এর শেষ পরিণতি।
প্রিয় পাঠক! একবার কল্পনা করুন বাচ্চার বাবা-মার মনের অবস্থা কেমন ছিলো সেদিন। দীর্ঘ তের বছর পর আল্লাহ তায়ালা একটি কন্যাসন্তান দিলেন, আবার জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তাকে রেখেও দিলেন। বাচ্চার মা এখনো তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারেনি। বাবা পারেননি কলিজার টুকরোটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে। কাঁদতে কাঁদতে সবার এখন বেহুশ হবার দশা।
প্রফেসর হামিদুর রহমান। আল্লাহর এক নেককার বান্দা। বাচ্চার বাবার নিকটতম আত্মীয়। তার কাছে পরামর্শ চাওয়া হলো। সবকিছু শুনে তিনি হাসপাতালে ছুটে চলে এলেন।
সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ। দুজনের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারেন না। বয়সের ভাড়ে কথাবার্তাও অস্পষ্ট। হাসপাতালে এসে মেয়ের বাবাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, “এখনই ওযু করে দু’রাকাত সলাত আদায় করে নাও। সলাত শেষে আল্লাহর সাথে কথা বলো। দু'চোখের পানি ঝরাও। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলো, ইয়া আল্লাহ! আমার মেয়েটাকে সুস্থ করে দেন।”
মেয়ের বাবা বুঝতে পারলেন তার এখন করণীয় কী। বাইরে থেকে দেখে তাকে যতই শক্ত মনে হোক না কেনো, ভেতরে ভেতরে অত্যন্ত নরম দিলের মানুষ তিনি। প্রফেসর সাহেবের কথাটি তিনি পুরোপুরি আমলে নিলেন।
ওযু করে এসে সলাত আদায় করলেন। চোখের পানি ফেলে আকুল গলায় দুআ করলেন। এতক্ষণের আহাজারি ছিলো দুঃখ কষ্ট আর হতাশার। আর এখনকার দু'আমিশ্রিত কান্নাগুলো পৌঁছে যাচ্ছে সরাসরি রবের দরবারে আশা-ভরসার নিরিখে।
বাচ্চার দাদী সৌদি আরবের এক লোকের কাছে নাতনীর জন্য লাখ টাকার অলংকার আনার জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলে দিলেন, "অলংকার লাগবে না। পুরো টাকা হারামের গরীব লোকজনের মাঝে সদাকাহ করে দাও।"
এদিকে বাচ্চার যায় যায় অবস্থা। ডাক্তাররা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। হয়তো আজকের রাতটাই শিশুর শেষ রাত। ফুসফুসের সমস্যার পাশাপাশি তারা বাচ্চার ব্লাডে ইনফেকশন এবং হার্টে ছিদ্রও পেয়েছেন। সামান্য সময়ের জন্য ভেন্টিলেশন খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাচ্চা অক্সিজেনের অভাবে কষ্টে লাফাতে শুরু করলে সাথে সাথে আবার ভেন্টিলেশনে দিয়ে দেওয়া হয়।
বাচ্চার বাবা আশা হারালেন না। প্রফেসর সাহেবের সেই ছোট্ট কথা -“আপনি আপনার আল্লাহর সাথে কথা বলেন।” - এটাই তার একমাত্র পুঁজি। তিনি আল্লাহর সাথে নিভৃতে কথা চালিয়ে গেলেন।
এভাবে পার হয়ে যায় একটি সপ্তাহ। বাচ্চাটি তখনও জীবিত।
গত পরশুর আগের দিন। সুখবর আসার দিন। ডাক্তাররা জানালেন আজকের পরীক্ষায় বাচ্চার হার্টে ছিদ্র পাননি। এটা মিশে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর তারা জানান ব্লাডের যে ইনফেকশনটা ছিল, সেটাও কমে এসেছে। কিন্তু ফুসফুসের সমস্যা? যেটার কোন চিকিৎসা নেই, সেটার কী হবে?
বর্তমান সময়ে করোনা পরিস্থিতিতে যারা সবচেয়ে নাম করেছেন, তাদের মধ্যেকার একজন কার্ডিওলজিস্ট আসলেন। আর্মির ব্রিগেডিয়ার তিনি। আজকের রিপোর্ট দেখে তিনি বললেন, "বাচ্চার ফুসফুসে এই মুহূর্তে কিছু শ্যাডো দেখা যাচ্ছে, যেটা কফের কারণে হতে পারে এবং এটা নিরাময়যোগ্য।"
এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না যে, এতোগুলো বিজ্ঞ ডাক্তারদের এক্সরে ও ইসিজিসহ এতো এতো টেস্টের পরেও ফুসফুসের শ্যাডো যে কফের কারণে, এটা রিপোর্টে আসবে না। বরং এখানে অবশ্যই আরশের রবের কুদরতের কারিশমা আছে, যা বান্দার ক্যালকুলেশনের সম্পূর্ণ বাইরের বিষয়।
আজ সকালে মক্কার একটি রেস্টুরেন্টে আমরা যখন নাস্তা করছিলাম, শেষ খবর পেলাম বাচ্চার ভেন্টিলেশন খুলে নেয়া হয়েছে। এখন আর খুব বেশী অক্সিজেন লাগছে না। দু-একদিনের ভেতর সেটারও আর প্রয়োজন হবে না, ইন শা আল্লাহ।
দুআ আর সদকা যে কী করতে পারে, একজন দুর্বল বান্দার জন্য তার মাবুদই যে যথেষ্ট, কীসের থেকে কী যে ঘটে যেতে পারে - তার চাক্ষুস প্রমাণ এই ঘটনা। নিশ্চয়ই আমার রব যদি অপ্রত্যাশিতভাবে বিপদে ফেলতে পারেন, তিনি কল্পনাতীতভাবে সেখান থেকে উদ্ধারও করতে পারেন।
নিশ্চয়ই তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। সর্বাবস্থায়, সর্বক্ষেত্রে।
দু'আ কবুলের গল্পগুলো ৩
170 BDT280 BDTSave 110 BDT
1
বই : দু'আ কবুলের গল্পগুলো ৩
আযান প্রকাশনী
মূদ্রিত মূল্য 280 টাকা
দু'আ কবুলের গল্পগুলো ৩ বই থেকে
বিয়ের তেরো বছর পর যেদিন প্রথম কন্যাসন্তান দুনিয়ার আলো দেখলো সেদিন তাদের আনন্দের কোনো সীমা পরিসীমা ছিল না। কন্যার বাবা পেশায় একজন আর্মি অফিসার। সন্তান পেটে আসার পর থেকে বাচ্চার মা সিএমএইচে সর্বোচ্চ কেয়ার পেয়েছিলেন। সম্পূর্ণ সুস্থ বাচ্চা ভুমিষ্ট হওয়ার পর তাই কেউ কল্পনাও করতে পারেনি এক ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার আধাঘন্টা পর হঠাৎ বাচ্চার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন দেওয়া হলো। কোনো লাভ হলো না। একঘন্টা পর সরাসরি ভেন্টিলেশনে। বাচ্চা অক্সিজেনও নিতে পারছে না। মাত্র আধাঘন্টার ব্যবধানে পুরো পরিবারের মাথায় আসমান ভেঙে পড়লো। স্কয়ার হাসপাতালের মতো এতো বড় হাসপাতালের ডাক্তারদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ দেখা গেলো। বিভিন্ন টেস্ট করার পর বিজ্ঞ ডাক্তাররা ফুসফুসের এমন একটি রোগের আশংকা করলেন, যেটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সচারাচর দেখা যায় না এবং অনেকে ক্ষেত্রে এর কোনো চিকিৎসাই নেই। মৃত্যুই এর শেষ পরিণতি।
প্রিয় পাঠক! একবার কল্পনা করুন বাচ্চার বাবা-মার মনের অবস্থা কেমন ছিলো সেদিন। দীর্ঘ তের বছর পর আল্লাহ তায়ালা একটি কন্যাসন্তান দিলেন, আবার জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তাকে রেখেও দিলেন। বাচ্চার মা এখনো তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারেনি। বাবা পারেননি কলিজার টুকরোটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে। কাঁদতে কাঁদতে সবার এখন বেহুশ হবার দশা।
প্রফেসর হামিদুর রহমান। আল্লাহর এক নেককার বান্দা। বাচ্চার বাবার নিকটতম আত্মীয়। তার কাছে পরামর্শ চাওয়া হলো। সবকিছু শুনে তিনি হাসপাতালে ছুটে চলে এলেন।
সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ। দুজনের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারেন না। বয়সের ভাড়ে কথাবার্তাও অস্পষ্ট। হাসপাতালে এসে মেয়ের বাবাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, “এখনই ওযু করে দু’রাকাত সলাত আদায় করে নাও। সলাত শেষে আল্লাহর সাথে কথা বলো। দু'চোখের পানি ঝরাও। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলো, ইয়া আল্লাহ! আমার মেয়েটাকে সুস্থ করে দেন।”
মেয়ের বাবা বুঝতে পারলেন তার এখন করণীয় কী। বাইরে থেকে দেখে তাকে যতই শক্ত মনে হোক না কেনো, ভেতরে ভেতরে অত্যন্ত নরম দিলের মানুষ তিনি। প্রফেসর সাহেবের কথাটি তিনি পুরোপুরি আমলে নিলেন।
ওযু করে এসে সলাত আদায় করলেন। চোখের পানি ফেলে আকুল গলায় দুআ করলেন। এতক্ষণের আহাজারি ছিলো দুঃখ কষ্ট আর হতাশার। আর এখনকার দু'আমিশ্রিত কান্নাগুলো পৌঁছে যাচ্ছে সরাসরি রবের দরবারে আশা-ভরসার নিরিখে।
বাচ্চার দাদী সৌদি আরবের এক লোকের কাছে নাতনীর জন্য লাখ টাকার অলংকার আনার জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলে দিলেন, "অলংকার লাগবে না। পুরো টাকা হারামের গরীব লোকজনের মাঝে সদাকাহ করে দাও।"
এদিকে বাচ্চার যায় যায় অবস্থা। ডাক্তাররা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। হয়তো আজকের রাতটাই শিশুর শেষ রাত। ফুসফুসের সমস্যার পাশাপাশি তারা বাচ্চার ব্লাডে ইনফেকশন এবং হার্টে ছিদ্রও পেয়েছেন। সামান্য সময়ের জন্য ভেন্টিলেশন খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাচ্চা অক্সিজেনের অভাবে কষ্টে লাফাতে শুরু করলে সাথে সাথে আবার ভেন্টিলেশনে দিয়ে দেওয়া হয়।
বাচ্চার বাবা আশা হারালেন না। প্রফেসর সাহেবের সেই ছোট্ট কথা -“আপনি আপনার আল্লাহর সাথে কথা বলেন।” - এটাই তার একমাত্র পুঁজি। তিনি আল্লাহর সাথে নিভৃতে কথা চালিয়ে গেলেন।
এভাবে পার হয়ে যায় একটি সপ্তাহ। বাচ্চাটি তখনও জীবিত।
গত পরশুর আগের দিন। সুখবর আসার দিন। ডাক্তাররা জানালেন আজকের পরীক্ষায় বাচ্চার হার্টে ছিদ্র পাননি। এটা মিশে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর তারা জানান ব্লাডের যে ইনফেকশনটা ছিল, সেটাও কমে এসেছে। কিন্তু ফুসফুসের সমস্যা? যেটার কোন চিকিৎসা নেই, সেটার কী হবে?
বর্তমান সময়ে করোনা পরিস্থিতিতে যারা সবচেয়ে নাম করেছেন, তাদের মধ্যেকার একজন কার্ডিওলজিস্ট আসলেন। আর্মির ব্রিগেডিয়ার তিনি। আজকের রিপোর্ট দেখে তিনি বললেন, "বাচ্চার ফুসফুসে এই মুহূর্তে কিছু শ্যাডো দেখা যাচ্ছে, যেটা কফের কারণে হতে পারে এবং এটা নিরাময়যোগ্য।"
এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না যে, এতোগুলো বিজ্ঞ ডাক্তারদের এক্সরে ও ইসিজিসহ এতো এতো টেস্টের পরেও ফুসফুসের শ্যাডো যে কফের কারণে, এটা রিপোর্টে আসবে না। বরং এখানে অবশ্যই আরশের রবের কুদরতের কারিশমা আছে, যা বান্দার ক্যালকুলেশনের সম্পূর্ণ বাইরের বিষয়।
আজ সকালে মক্কার একটি রেস্টুরেন্টে আমরা যখন নাস্তা করছিলাম, শেষ খবর পেলাম বাচ্চার ভেন্টিলেশন খুলে নেয়া হয়েছে। এখন আর খুব বেশী অক্সিজেন লাগছে না। দু-একদিনের ভেতর সেটারও আর প্রয়োজন হবে না, ইন শা আল্লাহ।
দুআ আর সদকা যে কী করতে পারে, একজন দুর্বল বান্দার জন্য তার মাবুদই যে যথেষ্ট, কীসের থেকে কী যে ঘটে যেতে পারে - তার চাক্ষুস প্রমাণ এই ঘটনা। নিশ্চয়ই আমার রব যদি অপ্রত্যাশিতভাবে বিপদে ফেলতে পারেন, তিনি কল্পনাতীতভাবে সেখান থেকে উদ্ধারও করতে পারেন।
নিশ্চয়ই তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। সর্বাবস্থায়, সর্বক্ষেত্রে।
আযান প্রকাশনী
মূদ্রিত মূল্য 280 টাকা
দু'আ কবুলের গল্পগুলো ৩ বই থেকে
বিয়ের তেরো বছর পর যেদিন প্রথম কন্যাসন্তান দুনিয়ার আলো দেখলো সেদিন তাদের আনন্দের কোনো সীমা পরিসীমা ছিল না। কন্যার বাবা পেশায় একজন আর্মি অফিসার। সন্তান পেটে আসার পর থেকে বাচ্চার মা সিএমএইচে সর্বোচ্চ কেয়ার পেয়েছিলেন। সম্পূর্ণ সুস্থ বাচ্চা ভুমিষ্ট হওয়ার পর তাই কেউ কল্পনাও করতে পারেনি এক ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার আধাঘন্টা পর হঠাৎ বাচ্চার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন দেওয়া হলো। কোনো লাভ হলো না। একঘন্টা পর সরাসরি ভেন্টিলেশনে। বাচ্চা অক্সিজেনও নিতে পারছে না। মাত্র আধাঘন্টার ব্যবধানে পুরো পরিবারের মাথায় আসমান ভেঙে পড়লো। স্কয়ার হাসপাতালের মতো এতো বড় হাসপাতালের ডাক্তারদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ দেখা গেলো। বিভিন্ন টেস্ট করার পর বিজ্ঞ ডাক্তাররা ফুসফুসের এমন একটি রোগের আশংকা করলেন, যেটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সচারাচর দেখা যায় না এবং অনেকে ক্ষেত্রে এর কোনো চিকিৎসাই নেই। মৃত্যুই এর শেষ পরিণতি।
প্রিয় পাঠক! একবার কল্পনা করুন বাচ্চার বাবা-মার মনের অবস্থা কেমন ছিলো সেদিন। দীর্ঘ তের বছর পর আল্লাহ তায়ালা একটি কন্যাসন্তান দিলেন, আবার জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তাকে রেখেও দিলেন। বাচ্চার মা এখনো তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারেনি। বাবা পারেননি কলিজার টুকরোটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে। কাঁদতে কাঁদতে সবার এখন বেহুশ হবার দশা।
প্রফেসর হামিদুর রহমান। আল্লাহর এক নেককার বান্দা। বাচ্চার বাবার নিকটতম আত্মীয়। তার কাছে পরামর্শ চাওয়া হলো। সবকিছু শুনে তিনি হাসপাতালে ছুটে চলে এলেন।
সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ। দুজনের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারেন না। বয়সের ভাড়ে কথাবার্তাও অস্পষ্ট। হাসপাতালে এসে মেয়ের বাবাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, “এখনই ওযু করে দু’রাকাত সলাত আদায় করে নাও। সলাত শেষে আল্লাহর সাথে কথা বলো। দু'চোখের পানি ঝরাও। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলো, ইয়া আল্লাহ! আমার মেয়েটাকে সুস্থ করে দেন।”
মেয়ের বাবা বুঝতে পারলেন তার এখন করণীয় কী। বাইরে থেকে দেখে তাকে যতই শক্ত মনে হোক না কেনো, ভেতরে ভেতরে অত্যন্ত নরম দিলের মানুষ তিনি। প্রফেসর সাহেবের কথাটি তিনি পুরোপুরি আমলে নিলেন।
ওযু করে এসে সলাত আদায় করলেন। চোখের পানি ফেলে আকুল গলায় দুআ করলেন। এতক্ষণের আহাজারি ছিলো দুঃখ কষ্ট আর হতাশার। আর এখনকার দু'আমিশ্রিত কান্নাগুলো পৌঁছে যাচ্ছে সরাসরি রবের দরবারে আশা-ভরসার নিরিখে।
বাচ্চার দাদী সৌদি আরবের এক লোকের কাছে নাতনীর জন্য লাখ টাকার অলংকার আনার জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলে দিলেন, "অলংকার লাগবে না। পুরো টাকা হারামের গরীব লোকজনের মাঝে সদাকাহ করে দাও।"
এদিকে বাচ্চার যায় যায় অবস্থা। ডাক্তাররা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। হয়তো আজকের রাতটাই শিশুর শেষ রাত। ফুসফুসের সমস্যার পাশাপাশি তারা বাচ্চার ব্লাডে ইনফেকশন এবং হার্টে ছিদ্রও পেয়েছেন। সামান্য সময়ের জন্য ভেন্টিলেশন খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাচ্চা অক্সিজেনের অভাবে কষ্টে লাফাতে শুরু করলে সাথে সাথে আবার ভেন্টিলেশনে দিয়ে দেওয়া হয়।
বাচ্চার বাবা আশা হারালেন না। প্রফেসর সাহেবের সেই ছোট্ট কথা -“আপনি আপনার আল্লাহর সাথে কথা বলেন।” - এটাই তার একমাত্র পুঁজি। তিনি আল্লাহর সাথে নিভৃতে কথা চালিয়ে গেলেন।
এভাবে পার হয়ে যায় একটি সপ্তাহ। বাচ্চাটি তখনও জীবিত।
গত পরশুর আগের দিন। সুখবর আসার দিন। ডাক্তাররা জানালেন আজকের পরীক্ষায় বাচ্চার হার্টে ছিদ্র পাননি। এটা মিশে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর তারা জানান ব্লাডের যে ইনফেকশনটা ছিল, সেটাও কমে এসেছে। কিন্তু ফুসফুসের সমস্যা? যেটার কোন চিকিৎসা নেই, সেটার কী হবে?
বর্তমান সময়ে করোনা পরিস্থিতিতে যারা সবচেয়ে নাম করেছেন, তাদের মধ্যেকার একজন কার্ডিওলজিস্ট আসলেন। আর্মির ব্রিগেডিয়ার তিনি। আজকের রিপোর্ট দেখে তিনি বললেন, "বাচ্চার ফুসফুসে এই মুহূর্তে কিছু শ্যাডো দেখা যাচ্ছে, যেটা কফের কারণে হতে পারে এবং এটা নিরাময়যোগ্য।"
এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না যে, এতোগুলো বিজ্ঞ ডাক্তারদের এক্সরে ও ইসিজিসহ এতো এতো টেস্টের পরেও ফুসফুসের শ্যাডো যে কফের কারণে, এটা রিপোর্টে আসবে না। বরং এখানে অবশ্যই আরশের রবের কুদরতের কারিশমা আছে, যা বান্দার ক্যালকুলেশনের সম্পূর্ণ বাইরের বিষয়।
আজ সকালে মক্কার একটি রেস্টুরেন্টে আমরা যখন নাস্তা করছিলাম, শেষ খবর পেলাম বাচ্চার ভেন্টিলেশন খুলে নেয়া হয়েছে। এখন আর খুব বেশী অক্সিজেন লাগছে না। দু-একদিনের ভেতর সেটারও আর প্রয়োজন হবে না, ইন শা আল্লাহ।
দুআ আর সদকা যে কী করতে পারে, একজন দুর্বল বান্দার জন্য তার মাবুদই যে যথেষ্ট, কীসের থেকে কী যে ঘটে যেতে পারে - তার চাক্ষুস প্রমাণ এই ঘটনা। নিশ্চয়ই আমার রব যদি অপ্রত্যাশিতভাবে বিপদে ফেলতে পারেন, তিনি কল্পনাতীতভাবে সেখান থেকে উদ্ধারও করতে পারেন।
নিশ্চয়ই তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। সর্বাবস্থায়, সর্বক্ষেত্রে।