An Najahah Shop

An Najahah Shop

EN

দুআ কবুলের গল্পগুলো 2

An Najahah Shop

দুআ কবুলের গল্পগুলো 2
  • দুআ কবুলের গল্পগুলো 2_img_0

দুআ কবুলের গল্পগুলো 2

240 BDT280 BDTSave 40 BDT
sold_units 1


বইঃ দু'আ কবুলের গল্পগুলো - ২
সংগ্রহ ও ভাষান্তরঃ মুহিব্বুল্লাহ খন্দকার ও রাজিব হাসান
সম্পাদনা ও সংযোজনঃ রাজিব হাসান।


।।এক মাজলুম মেয়ের দুআ।।

.
আরব ভুখন্ডে বহু গোত্রের মাঝে এমন মানুষ আছে যারা তাদের মেয়েদের দিয়ে ঘরের বাইরে চাকরি করায়। মেয়েদের উপার্জন দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করায়। বিশেষ করে পরিবারের মা-বাবারা তাদের মেয়েকে দিয়ে এই হীন কাজটি করিয়ে থাকেন। এ অবস্থা শুধুমাত্র আরব্য সমাজেই পরিলক্ষিত হয়না, বরং বর্তমান দুনিয়ার অধিকাংশ সমাজের চিত্র এটি। ফলশ্রুতিতে এই ক্যারিয়ার নামক চোরাগলির ফাঁদে পড়েঅনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের বিয়ে দিতে দেরী করেন। এর পিছনে কাজ করে জাগতিক স্বার্থ ও লোভ লালসা। মেয়েকে বিয়ে দিলে উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে এই ভয়ে অনেক অভিভাবক মেয়েকে বিয়ে দিতে চান না। নব্য জাহিলিয়াত হয়ত একেই বলে।
.
এই ব্যাপারে একটা ঘটনা না বললেই নয়। সৌদি আরবের এক খতিবের মুখ থেকে শোনা। আমি এই ঘটনার সত্যতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ করিনা। কেননা, মাজলুমের দুআ আল্লাহ তাআলার দরবারে খুব দ্রুতই কবুল হয়।

এক ব্যক্তির ঘরে ছিল চার চারটি মেয়ে। চারজনের প্রত্যেকেই চাকরি করত। প্রয়োজনের চাইতে বেশী উপার্জন ছিল তাদের। তাদের উপার্জিত অর্থ পুরা পরিবারের জন্য জন্য যথেষ্ট ছিল। এই উপার্জনের লোভে পড়ে তাদের পিতা তাদের বিয়ে দিতে চাচ্ছিল না। বিয়ে দিলেই তো উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। বসে বসে এতো আয় উপার্জনের দ্বার বন্ধ হয়ে যাবে। এই ভয়ে তিনি মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে চাইতেন না। অনেক ভালো বিয়ে এসেছে, কিন্তু বারবারই তিনি বিভিন্ন অজুহাতে ফিরিয়ে দিতেন। কখনও বংশীয় কারণে, কখনও অর্থনৈতিক অজুহাতে, কখনও জীবনযাত্রার নিম্নমানের অজুহাতে নিত্যনতুন বাহানা বানাতেন। মেয়েরা তাদের বাবার এই কার্যকলাপে ভীষণ কষ্ট পেত। তাঁরা না পারত মুখ ফুটে কিছু বলতে, না পারত কিছু করতে। নিজেদের জন্য একটা সংসার, একটা ফুটফুটে সন্তান, সর্বোপরি একটা জান্নাতী পরিবারের স্বপ্ন দেখত। ভিতরে ভিতর দুমড়েমুচড়ে গেলেও চক্ষুলজ্জার ভয়ে কোন প্রতিবাদ করতে পারত না। ভীষণ কষ্টে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখত।

.
একবার লোকটি মেয়েদেরকে সাথে নিয়ে উমরাহ করতে গেলেন। হারামে প্রবেশ করতেই তাঁর এক মেয়ে তাকে বলল, “আব্বা! আমি একটি দুআ করছি, আপনি আমার সাথে শুধু “আমিন” বলবেন। লোকটি তার মেয়ের কথায় রাজী হয়ে গেলেন। মেয়ের দুআর ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানতেন না তিনি। মেয়েটি হাত উঠিয়ে চুপিচুপি আল্লাহর কাছে দুআ করছিল, “হে আল্লাহ! এই ব্যক্তি আমাকে যেমন বিবাহ থেকে বিরত রেখেছে, তুমিও তার দুই হাত যাবতীয় কল্যাণ থেকে বিরত রাখ।“ বাকী তিন মেয়েও তার দুআয় “আমিন” বলল।

.
প্রিয় পাঠক! এরপর কি ঘটল তা জানলে আপনারা বুঝতে পারবেন মাজলুমের দুআর ধার কতটুকু?
মেয়েটির দুআ তখনও শেষ হয়নি। এর মাঝেই দেখা গেল, তাঁর পিতার হাত ও পা দুটোই অবশ হয়ে গেছে। তাঁর জুলুম, বাহানাবাজি আর পার্থিব লোভ লালসার কারণে আল্লাহ্‌ রব্বুল ইজ্জাহ তাকে পাকড়াও করে ফেললেন। তিনি উপুড় হয়ে কাবা প্রাঙনে পড়ে রইলেন। (১)

.
সাহাবী মু’আয বিন জাবাল (রাঃ) কে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) নসিহত হিসেবে বলেছিলেন, “মাজলুমের বদ-দুআ থেকে বাঁচবে, কারণ তার বদ দুআ আর আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই” (২)

.
প্রিয় পাঠক! আমাদের প্রিয় নবী (সা) এর চারজন কন্যা সন্তান ছিল। ফাতেমা (রা), যয়নব (রাঃ), রুকাইয়া (রাঃ), উম্মে কুলসুম (রাঃ) । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজের আমলের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের সম্মান, তার প্রতি স্নেহ ও মহব্বতের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদেরকে বিবাহ দিয়েছেন। আমরাও তাঁর অনুসরণের মাধ্যমে নিজের কন্যা সন্তানের সাথে তেমন আচরণ করতে পারি, যেমনটি তিনি তার কন্যাদের সাথে করে দেখিয়েছেন।

.
হযরত আনাস রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন,
যে ব্যক্তি দুইজন কন্যা সন্তানকে লালনপালন ও দেখাশুনা করল (বিয়ের সময় হলে ভাল পাত্রের কাছে বিবাহ দিল) সে এবং আমি জান্নাতে এরূপ একসাথে প্রবেশ করব যেরূপ এ দুটি আঙুল। তিনি নিজের দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন। (২)
কন্যা সন্তান প্রতিপালনের সকল ফজিলতের সারমর্ম হল তিনটি জিনিস।
এক. আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন।
দুই. জান্নাত দান করবেন। যা নিআমত ও আরাম আয়েশের স্থান।
তিন. আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে রাসূলুল্লাহ (সা) এর সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য দান করবেন। যা সফলতার সর্বোচ্চ চূড়া।
.
তাহলে কোন সে আশায় আমি এই সুযোগ হাতছাড়া করছি?

তথ্যসূত্রঃ
১। আবদুল মালিক মুজাহিদ। কিতাবঃ দুআউ কি কবুলিয়ত কি সুনেহরি কাহানিয়া কিতাবের ভাবানুবাদ।
২। বুখারী, হাদিস নম্বরঃ ১৩৯৫, সহিহ মুসলিমঃ ১৯
৩। জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯১৪

____