কুরআনের সৌন্দর্য
.বই : কুরআনের সৌন্দর্যলেখক : Abdullah Al Masudপ্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন.কুরআনের একটা অক্ষরও আল্লাহ তাআলা অনর্থক হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটাননি। যেখানে একই রকম আয়াতে সামান্য কমবেশ দেখা যায়, গভীরভাবে খেয়াল করলে এর পেছনেও কোনো-না-কোনো ভাষাগত সৌন্দর্য নজরে পড়ে। এই সামান্য কিছুর হ্রাস ঘটানো বা বৃদ্ধি করার মধ্যেও লুকিয়ে থাকে মহান আল্লাহর কিছু বার্তা ও হিকমত। কুরআনের অনন্যতা এখানেই। এত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে কোনো জিন ও ইনসানের পক্ষে সম্ভব নয় নিজস্ব রচনা তৈরি করা। .মানুষের জীবনে যেসব বিপদ-মুসিবত আসে, সেগুলো দুই ধরনের হয়ে থাকে। ১. প্রাকৃতিকভাবে আপতিত বিপদ-মুসিবত। যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, ভূমিধ্বস ইত্যাদি। এগুলোর পেছনে কোনো ব্যক্তির হাত থাকে না। এমন না যে, কেউ শত্রুতা করে কাউকে এসব মুসিবতে ফাঁসাতে পারে। এই জাতীয় বিপদ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো বিষয় থাকে না। .২. মানুষের তৈরি বিভিন্ন বিপদ-মুসিবত। যেমন- শত্রুতাবশত কেউ আঘাত করল কিংবা ষড়যন্ত্র করে বিপদে ফেলল। এই জাতীয় বিপদ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে মানুষ প্রতিশোধ নিতে চায়। যে তাকে বিপদে ফেলেছে তাকে পালটা বিপদে ফেলতে কিংবা উলটো আঘাত করতে বদ্ধপরিকর হয়। .প্রথম প্রকারের বিপদ-মুসিবতে একজন ব্যক্তির সবর করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। যেহেতু সেগুলো মনুষ্যসৃষ্ট নয়। পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টাতে সবর এবং ক্ষমা না করে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকে। তারপরও প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া ও সবরের পথে হাঁটা অনেক বড় হিম্মতের ব্যাপার। এটি নিঃসন্দেহে প্রথমটির তুলনায় অনেক বেশি কষ্টসাধ্য ও অধিক দৃঢ়তার পরিচায়ক। .আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই পুরো ব্যাপারটিই ফুটিয়ে তুলেছেন সামান্য একটি অক্ষর বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। তিনি সবর করার উপদেশ দেওয়ার পর এটি দৃঢ়তার পরিচায়ক বলে উল্লেখ করেছেন একই রকম দুইটি আয়াতে। তবে একটিতে দৃঢ়তাসূচক ‘লাম’ বৃদ্ধি করেছেন, অন্যটিতে করেননি উভয়ের মধ্যকার তারতম্যটা স্পষ্ট করার জন্য। .প্রথমে এই দুইটি আয়াত লক্ষ্য করুন-.সূরা লুকমানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ‘এবং তুমি সবর করো আক্রান্ত হওয়া বিপদ-মুসিবতে, নিশ্চয়ই তা দৃঢ় সঙ্কল্পের পরিচায়ক।’ .এবং সূরা শুরাতে তিনি বলেছেন, وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ‘এবং যে সবর করবে ও ক্ষমা করবে, নিশ্চয়ই তা দৃঢ় সংকল্পের পরিচায়ক।’ .উভয় আয়াতেই শেষের অংশটুকু একই রকম হওয়া সত্ত্বেও আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রথমটাতে লাম ছাড়া বলা হয়েছে—মিন আযমিল উমূর, আর অন্যটিতে লাম যোগে বলা হয়েছে—লামিন আযমিল উমূর। .এই তারতম্যের পেছনে যে অর্থ প্রকাশক ভাষাগত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তা আমরা আগেই ব্যাখ্যা করে এসেছি। আশা করি ইতিমধ্যে বিজ্ঞ পাঠক তা ধরতে পেরেছেন। কারও কারও মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই বিভাজনের ভিত্তি কীসের ওপর? তাদের জন্য আরেকটু খুলে বলছি। .খেয়াল করে দেখুন, সূরা লুকমানের আয়াতে আল্লাহ তাআলা সাধারণভাবে শুধু সবরের কথা বললেন। সেখানে ক্ষমার কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপিত করেননি। পক্ষান্তরে সূরা শুরার আয়াতে সবরের সাথে ক্ষমার প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। তার মানে এটি এমন বিপদ-মুসিবতে সবর, যা অন্যের দ্বারা সৃষ্ট। এর ফলেই তাকে ক্ষমা করার বিষয়টা প্রাসঙ্গিকভাবে চলে আসছে। .সুতরাং কেউ যদি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে এটি অধিক কষ্টসাধ্য হওয়ার দরুন আল্লাহ প্রতিদানও বেশি দেবেন বলে আশা করা যায়। আল্লাহর দরবারে এটি বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। সেজন্যই আল্লাহর প্রিয় বান্দারা মানুষকে ক্ষমা করতে ভালোবাসতেন। কারণ, তারা জানতেন, এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছে প্রভূত কল্যাণ লাভের হকদার হবেন। .হাসান বাসরি (রহিমাহুল্লাহ) একরাতে বারবার দুআ করছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আমার প্রতি যুলুমকারীকে আপনি ক্ষমা করে দিন।’ এই দুআ তিনি বারবার বলে যেতে থাকলেন। .জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘গতরাতে আপনাকে এতবার আপনার প্রতি যুলুমকারীকে ক্ষমা করে দেবার প্রার্থনা করতে শুনলাম যে, এক পর্যায়ে মনে হয়েছে আমিও যদি আপনার প্রতি যুলুমকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম! তো, কী কারণে আপনি বারবার এই দুআটা করলেন?’.তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ‘অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপোস করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট রয়েছে।’ .সবর মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করে দেয়। অনেক জটিল ও কঠিন সমস্যাকে লঘু করে দেয়। এটি মুমিনের ভূষণ ও বিপদে তার বাহন। সবরকারীর জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। সবর হোক আমাদের সকলের জীবনের সৌন্দর্য!..
An Najahah Shop
Category List
All products

.বই : কুরআনের সৌন্দর্য
লেখক : Abdullah Al Masud
প্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন
.
কুরআনের একটা অক্ষরও আল্লাহ তাআলা অনর্থক হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটাননি। যেখানে একই রকম আয়াতে সামান্য কমবেশ দেখা যায়, গভীরভাবে খেয়াল করলে এর পেছনেও কোনো-না-কোনো ভাষাগত সৌন্দর্য নজরে পড়ে। এই সামান্য কিছুর হ্রাস ঘটানো বা বৃদ্ধি করার মধ্যেও লুকিয়ে থাকে মহান আল্লাহর কিছু বার্তা ও হিকমত। কুরআনের অনন্যতা এখানেই। এত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে কোনো জিন ও ইনসানের পক্ষে সম্ভব নয় নিজস্ব রচনা তৈরি করা।
.
মানুষের জীবনে যেসব বিপদ-মুসিবত আসে, সেগুলো দুই ধরনের হয়ে থাকে।
১. প্রাকৃতিকভাবে আপতিত বিপদ-মুসিবত। যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, ভূমিধ্বস ইত্যাদি। এগুলোর পেছনে কোনো ব্যক্তির হাত থাকে না। এমন না যে, কেউ শত্রুতা করে কাউকে এসব মুসিবতে ফাঁসাতে পারে। এই জাতীয় বিপদ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো বিষয় থাকে না।
.
২. মানুষের তৈরি বিভিন্ন বিপদ-মুসিবত। যেমন- শত্রুতাবশত কেউ আঘাত করল কিংবা ষড়যন্ত্র করে বিপদে ফেলল। এই জাতীয় বিপদ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে মানুষ প্রতিশোধ নিতে চায়। যে তাকে বিপদে ফেলেছে তাকে পালটা বিপদে ফেলতে কিংবা উলটো আঘাত করতে বদ্ধপরিকর হয়।
.
প্রথম প্রকারের বিপদ-মুসিবতে একজন ব্যক্তির সবর করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। যেহেতু সেগুলো মনুষ্যসৃষ্ট নয়। পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টাতে সবর এবং ক্ষমা না করে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকে। তারপরও প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া ও সবরের পথে হাঁটা অনেক বড় হিম্মতের ব্যাপার। এটি নিঃসন্দেহে প্রথমটির তুলনায় অনেক বেশি কষ্টসাধ্য ও অধিক দৃঢ়তার পরিচায়ক।
.
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই পুরো ব্যাপারটিই ফুটিয়ে তুলেছেন সামান্য একটি অক্ষর বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। তিনি সবর করার উপদেশ দেওয়ার পর এটি দৃঢ়তার পরিচায়ক বলে উল্লেখ করেছেন একই রকম দুইটি আয়াতে। তবে একটিতে দৃঢ়তাসূচক ‘লাম’ বৃদ্ধি করেছেন, অন্যটিতে করেননি উভয়ের মধ্যকার তারতম্যটা স্পষ্ট করার জন্য।
.
প্রথমে এই দুইটি আয়াত লক্ষ্য করুন-
.
সূরা লুকমানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
‘এবং তুমি সবর করো আক্রান্ত হওয়া বিপদ-মুসিবতে, নিশ্চয়ই তা দৃঢ় সঙ্কল্পের পরিচায়ক।’
.
এবং সূরা শুরাতে তিনি বলেছেন,
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
‘এবং যে সবর করবে ও ক্ষমা করবে, নিশ্চয়ই তা দৃঢ় সংকল্পের পরিচায়ক।’
.
উভয় আয়াতেই শেষের অংশটুকু একই রকম হওয়া সত্ত্বেও আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রথমটাতে লাম ছাড়া বলা হয়েছে—মিন আযমিল উমূর, আর অন্যটিতে লাম যোগে বলা হয়েছে—লামিন আযমিল উমূর।
.
এই তারতম্যের পেছনে যে অর্থ প্রকাশক ভাষাগত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তা আমরা আগেই ব্যাখ্যা করে এসেছি। আশা করি ইতিমধ্যে বিজ্ঞ পাঠক তা ধরতে পেরেছেন। কারও কারও মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই বিভাজনের ভিত্তি কীসের ওপর? তাদের জন্য আরেকটু খুলে বলছি।
.
খেয়াল করে দেখুন, সূরা লুকমানের আয়াতে আল্লাহ তাআলা সাধারণভাবে শুধু সবরের কথা বললেন। সেখানে ক্ষমার কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপিত করেননি। পক্ষান্তরে সূরা শুরার আয়াতে সবরের সাথে ক্ষমার প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। তার মানে এটি এমন বিপদ-মুসিবতে সবর, যা অন্যের দ্বারা সৃষ্ট। এর ফলেই তাকে ক্ষমা করার বিষয়টা প্রাসঙ্গিকভাবে চলে আসছে।
.
সুতরাং কেউ যদি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে এটি অধিক কষ্টসাধ্য হওয়ার দরুন আল্লাহ প্রতিদানও বেশি দেবেন বলে আশা করা যায়। আল্লাহর দরবারে এটি বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। সেজন্যই আল্লাহর প্রিয় বান্দারা মানুষকে ক্ষমা করতে ভালোবাসতেন। কারণ, তারা জানতেন, এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছে প্রভূত কল্যাণ লাভের হকদার হবেন।
.
হাসান বাসরি (রহিমাহুল্লাহ) একরাতে বারবার দুআ করছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আমার প্রতি যুলুমকারীকে আপনি ক্ষমা করে দিন।’ এই দুআ তিনি বারবার বলে যেতে থাকলেন।
.
জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘গতরাতে আপনাকে এতবার আপনার প্রতি যুলুমকারীকে ক্ষমা করে দেবার প্রার্থনা করতে শুনলাম যে, এক পর্যায়ে মনে হয়েছে আমিও যদি আপনার প্রতি যুলুমকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম! তো, কী কারণে আপনি বারবার এই দুআটা করলেন?’
.
তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ
‘অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপোস করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট রয়েছে।’
.
সবর মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করে দেয়। অনেক জটিল ও কঠিন সমস্যাকে লঘু করে দেয়। এটি মুমিনের ভূষণ ও বিপদে তার বাহন। সবরকারীর জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। সবর হোক আমাদের সকলের জীবনের সৌন্দর্য!
.
.
কুরআনের সৌন্দর্য
170 BDT230 BDTSave 60 BDT
1
.বই : কুরআনের সৌন্দর্য
লেখক : Abdullah Al Masud
প্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন
.
কুরআনের একটা অক্ষরও আল্লাহ তাআলা অনর্থক হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটাননি। যেখানে একই রকম আয়াতে সামান্য কমবেশ দেখা যায়, গভীরভাবে খেয়াল করলে এর পেছনেও কোনো-না-কোনো ভাষাগত সৌন্দর্য নজরে পড়ে। এই সামান্য কিছুর হ্রাস ঘটানো বা বৃদ্ধি করার মধ্যেও লুকিয়ে থাকে মহান আল্লাহর কিছু বার্তা ও হিকমত। কুরআনের অনন্যতা এখানেই। এত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে কোনো জিন ও ইনসানের পক্ষে সম্ভব নয় নিজস্ব রচনা তৈরি করা।
.
মানুষের জীবনে যেসব বিপদ-মুসিবত আসে, সেগুলো দুই ধরনের হয়ে থাকে।
১. প্রাকৃতিকভাবে আপতিত বিপদ-মুসিবত। যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, ভূমিধ্বস ইত্যাদি। এগুলোর পেছনে কোনো ব্যক্তির হাত থাকে না। এমন না যে, কেউ শত্রুতা করে কাউকে এসব মুসিবতে ফাঁসাতে পারে। এই জাতীয় বিপদ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো বিষয় থাকে না।
.
২. মানুষের তৈরি বিভিন্ন বিপদ-মুসিবত। যেমন- শত্রুতাবশত কেউ আঘাত করল কিংবা ষড়যন্ত্র করে বিপদে ফেলল। এই জাতীয় বিপদ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে মানুষ প্রতিশোধ নিতে চায়। যে তাকে বিপদে ফেলেছে তাকে পালটা বিপদে ফেলতে কিংবা উলটো আঘাত করতে বদ্ধপরিকর হয়।
.
প্রথম প্রকারের বিপদ-মুসিবতে একজন ব্যক্তির সবর করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। যেহেতু সেগুলো মনুষ্যসৃষ্ট নয়। পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টাতে সবর এবং ক্ষমা না করে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকে। তারপরও প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া ও সবরের পথে হাঁটা অনেক বড় হিম্মতের ব্যাপার। এটি নিঃসন্দেহে প্রথমটির তুলনায় অনেক বেশি কষ্টসাধ্য ও অধিক দৃঢ়তার পরিচায়ক।
.
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই পুরো ব্যাপারটিই ফুটিয়ে তুলেছেন সামান্য একটি অক্ষর বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। তিনি সবর করার উপদেশ দেওয়ার পর এটি দৃঢ়তার পরিচায়ক বলে উল্লেখ করেছেন একই রকম দুইটি আয়াতে। তবে একটিতে দৃঢ়তাসূচক ‘লাম’ বৃদ্ধি করেছেন, অন্যটিতে করেননি উভয়ের মধ্যকার তারতম্যটা স্পষ্ট করার জন্য।
.
প্রথমে এই দুইটি আয়াত লক্ষ্য করুন-
.
সূরা লুকমানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
‘এবং তুমি সবর করো আক্রান্ত হওয়া বিপদ-মুসিবতে, নিশ্চয়ই তা দৃঢ় সঙ্কল্পের পরিচায়ক।’
.
এবং সূরা শুরাতে তিনি বলেছেন,
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
‘এবং যে সবর করবে ও ক্ষমা করবে, নিশ্চয়ই তা দৃঢ় সংকল্পের পরিচায়ক।’
.
উভয় আয়াতেই শেষের অংশটুকু একই রকম হওয়া সত্ত্বেও আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রথমটাতে লাম ছাড়া বলা হয়েছে—মিন আযমিল উমূর, আর অন্যটিতে লাম যোগে বলা হয়েছে—লামিন আযমিল উমূর।
.
এই তারতম্যের পেছনে যে অর্থ প্রকাশক ভাষাগত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তা আমরা আগেই ব্যাখ্যা করে এসেছি। আশা করি ইতিমধ্যে বিজ্ঞ পাঠক তা ধরতে পেরেছেন। কারও কারও মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই বিভাজনের ভিত্তি কীসের ওপর? তাদের জন্য আরেকটু খুলে বলছি।
.
খেয়াল করে দেখুন, সূরা লুকমানের আয়াতে আল্লাহ তাআলা সাধারণভাবে শুধু সবরের কথা বললেন। সেখানে ক্ষমার কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপিত করেননি। পক্ষান্তরে সূরা শুরার আয়াতে সবরের সাথে ক্ষমার প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। তার মানে এটি এমন বিপদ-মুসিবতে সবর, যা অন্যের দ্বারা সৃষ্ট। এর ফলেই তাকে ক্ষমা করার বিষয়টা প্রাসঙ্গিকভাবে চলে আসছে।
.
সুতরাং কেউ যদি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে এটি অধিক কষ্টসাধ্য হওয়ার দরুন আল্লাহ প্রতিদানও বেশি দেবেন বলে আশা করা যায়। আল্লাহর দরবারে এটি বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। সেজন্যই আল্লাহর প্রিয় বান্দারা মানুষকে ক্ষমা করতে ভালোবাসতেন। কারণ, তারা জানতেন, এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছে প্রভূত কল্যাণ লাভের হকদার হবেন।
.
হাসান বাসরি (রহিমাহুল্লাহ) একরাতে বারবার দুআ করছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আমার প্রতি যুলুমকারীকে আপনি ক্ষমা করে দিন।’ এই দুআ তিনি বারবার বলে যেতে থাকলেন।
.
জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘গতরাতে আপনাকে এতবার আপনার প্রতি যুলুমকারীকে ক্ষমা করে দেবার প্রার্থনা করতে শুনলাম যে, এক পর্যায়ে মনে হয়েছে আমিও যদি আপনার প্রতি যুলুমকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম! তো, কী কারণে আপনি বারবার এই দুআটা করলেন?’
.
তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ
‘অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপোস করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট রয়েছে।’
.
সবর মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করে দেয়। অনেক জটিল ও কঠিন সমস্যাকে লঘু করে দেয়। এটি মুমিনের ভূষণ ও বিপদে তার বাহন। সবরকারীর জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। সবর হোক আমাদের সকলের জীবনের সৌন্দর্য!
.
.