শিশুর মননে ঈমান
বইয়ের নাম : শিশুর মননে ঈমান লেখকের নাম : ড. আইশা হামদান প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশনশিশুর মননে ঈমান : যে বইটি প্রত্যেক পিতামাতার পড়া উচিত ✲ আভাষ :বিশ্বায়নের এই যুগে প্রত্যেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের উন্নত ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে যতটা না উদ্যোগী; তারচেয়ে বেশি উদাসীন, তাদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করার ব্যাপারে। সন্তান পার্থিব শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নতি লাভ করলেও, ধর্মীয় বিষয়ে থাকে অজ্ঞ। ফলে, নানা জাগতিক চিন্তা-চেতনা তাকে সর্বদা গ্রাস করে রাখে। রঙিন দুনিয়ার রূপ-ঐশ্বর্যের মোহে পড়ে পদে পদে সে পথ হারায়। অথচ বাবা-মায়ের এই আদরের সন্তানটিই হতে পারে তাদের জান্নাত বা জাহান্নামে কারণ। কখনো কি ভেবে দেখেছি, আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করি ঠিকই; কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্বগুলো কী ঠিকঠাক পালন করি? নিজের কাজ ঠিকমতো না করে, অন্যের কাছ থেকে প্রতিদান আশা করা কি ঠিক? আমাদের উচিত, সন্তানদের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। মানুষের চিন্তা ও কাজের গতি ঠিক করে দেয় তার হৃদয়ের গভীরের ঈমান বা বিশ্বাস। এজন্য শিশুর মনে জ্বেলে দিতে হবে ঈমানের আলোকবর্তিকা। দেখাতে হবে সত্য ও সুন্দরের পথ। তাকে জানাতে হবে আল্লাহ, ফেরেশতা, নবি-রাসূল, আসমানি কিতাব, মৃত্যু, কিয়ামত ও পরকাল সম্পর্কে। সন্তানকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে, আসন্ন জীবনের বড় বড় দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ পালনের জন্য। ঔদাসীন্য দূর করে প্রত্যেক বাবা-মা যখন দায়িত্বশীল হবে; ঠিক তখন ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান আরও একটি প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এই শিক্ষণীয় কথাগুলোই উঠে এসেছে Nurturing Eman in children নামক অনবদ্য বইটিতে। ড. আইশা হামদান পশ্চিমা সমাজের কথা মাথায় রেখে বইটি রচনা করলেও, মূলত সবার জন্যই অবশ্যপাঠ্য। ১২০ পৃষ্ঠার বইটি মাসুদ শরীফ ও সারাহ ইসলাম কর্তৃক অনূদিত হয়ে, মলাটবদ্ধ হয়েছে ‘শিশুর মননে ঈমান’ শিরোনামে। ✲ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা :আলোচ্য গ্রন্থটি মোট ১৬ টি পরিচ্ছেদ ও অনেকগুলো উপ-পরিচ্ছেদে বিভক্ত। এতে প্রকাশক, সম্পাদক ও লেখিকার বাণীর পর আছে দীর্ঘ সূচিপত্র। এরপর ঈমানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনার মাধ্যমে শুরু করা হয় মূলপাঠ। সন্তান প্রতিপালনের আগে যে বিষয়গুলো জানা একান্ত জরুরি, সেগুলো নিয়ে প্রথমে কিছুটা আলোকপাত করা হয়। অতঃপর গুরুত্বারোপ করা হয় জীবনসঙ্গী নির্বাচন, বিবাহ সম্পাদন ও পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলার ব্যাপারে। একজন মুসলিমের বাড়ির পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত, কীভাবে ঘরকে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করা যায়, তাও বলা হয়। এরপর ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়, বাবা-মা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ। সন্তানের আত্মিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ক্ষেত্রে মায়েদের পাশাপাশি বাবাদেরও কাজ করতে হয়। আধুনিক গবেষণামতে সন্তান প্রতিপালনে বাবাদের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে বইটাতে। আমরা জানি, ইসলামে নারীদের জন্য চাকরিতে অংশগ্রহণ করা একেবারে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু সেজন্য তাকে কিছু শর্ত ও নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। খেয়াল রাখতে হয়, ব্যস্ততার কারণে যেন স্বামী-সন্তান ও সংসারের ক্ষতি না হয়। এই জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো খুব দক্ষতার সাথে উঠে এসেছে লেখিকার কলমে। গুরুগম্ভীর আলোচনার চেয়ে, বর্ণনামূলক কাহিনি মানুষের মনে গেঁথে যায় সহজেই। বইটিতে সেই কৌশলটিই ব্যবহার করা হয়েছে। বর্ণনার পাশাপাশি সুন্দর উদাহরণ বইটার গুরুত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটি টপিক সাজানো হয়েছে কুরআন-হাদিসে বর্ণিত ঈমানের মৌলিক শর্তগুলো প্রাধান্য দিয়ে। বিভিন্ন রুপক উপমা দিয়ে গল্প-কথা ও কাজের ছলে কীভাবে সেগুলো বাচ্চাকে শেখানো যায়, করা হয়েছে তার প্রাকটিক্যাল আলোচনা। এ বিষয়টি আমার কাছে বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক মনে হয়েছে। সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা খুব কঠিন কাজ। সেজন্য মানসিক পরিশ্রমের পাশাপাশি করতে হয় দৈহিক খাটাখাটুনি। অনেককিছু বিসর্জন দিয়ে ধৈর্যের সহিত লেগে থাকতে হয়। অথচ এ নিয়ে আমাদের না আছে বিশেষ কোনো পড়াশোনা বা প্রস্তুতি। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ করবে। বইয়ের কথাগুলো অনুসরণ করলে, বাবা-মা-সন্তান মিলে তৈরি হবে এক সুস্থ ও সুখী পরিবার। স্নেহ, মায়া-মমতার বন্ধনে সৃষ্টি হবে শান্তিময় স্বপ্নিল পরিবেশ।বইটা পড়তে পড়তে ছেলেবেলার একটা নিখুঁত ছবি ভেসে ওঠে হৃদয়ের ফ্রেমে। ইশ! আমাদের বাবা-মায়েরও যদি বইটি পড়া থাকতো, তারাও যদি এমনভাবে আমাদের শেখাতেন, কতই না ভালো হতো! লেখিকা একজন কনভার্টেড মুসলিমা হয়েও মুসলিম সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। মুসলিম পরিবারগুলো আজ পারভাঙ্গা নদীর মতো ভেঙে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মরণের খেয়াঘাটে। একটি ইসলামি পরিবার গঠনে ধর্মীয় জ্ঞান যে কতখানি অপরিহার্য, তা এই মূল্যবান বইয়ের পাঠকমাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন। বইটা সংকলন করতে গিয়ে লেখিকা অনেক গবেষণা ও পরিশ্রম করেছেন, যার স্পষ্ট ছাপ ফুটে ওঠে তার জ্ঞানগর্ভ লেখনিতে।সর্বোপরি, এ বইটি শিশুদের জন্য নয়; বরং অভিভাবকদের জন্য। সদ্য বাবা-মা হওয়াদের জন্য হাইলি রেকমেন্ডেড। ✲ প্রোডাকশন, অনুবাদ ও অন্যান্য : দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ ও চিত্তাকর্ষক শিরোনামে ফুটে উঠেছে বইয়ের মূল থিম। অর্থবহ প্রচ্ছদটি এঁকেছে সমকালীন গ্রাফিক্স টিম। ফ্ল্যাপের লেখাগুলোও খুব সুন্দর। যদিও প্রথম মুদ্রণের বই, তবুও আমি কোনো টাইপিং মিসটেক প্রত্যক্ষ করিনি। তবে বানানের বিষয়ে কিছুটা আপত্তির জায়গা রয়ে যায়। ভেতরের অঙ্গসজ্জা, লেখার ফন্ট সাইজ ও স্পেস যুৎসই ছিল। বইয়ের শেষে পাঠকের জন্য রাখা হয়েছে নোট পাতা। ১৭৬ টাকা মুদ্রিত মূল্যের গ্রন্থটি পেপারব্যাক আকারে পাওয়া যায়। তবে গুরুত্বের বিচারে হার্ডকভারে বাঁধাই করা থাকলে ভালো হতো। অত্যন্ত যত্নের সহিত এমন মানসম্পন্ন লেখা উপহার দেওয়ার জন্য; অনুবাদক দ্বয়কে অজস্র ধন্যবাদ। সুখপাঠ্য শব্দের গাঁথুনিতে বর্ণনার গতি এবং ভাষার ভাব ও প্রাঞ্জলতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকখানি। এরকম সহজ, সাবলীল ও ঝরঝরে অনুবাদের বই খুব কমই চোখে পড়ে। সম্পাদনাও হয়েছে বেশ দারুণ। খাপছাড়া কিছু নয়, একদম ধারাবাহিক বর্ণনা। ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনীয় টিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। যারা অ্যাকাডেমিক ধাঁচের বইয়ে মনোযোগ রাখতে পারেন না, তারাও স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ে ফেলতে পারবেন। বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তুলতে যতটা সংক্ষিপ্ত করা যায়, বইয়ের কলেবর ঠিক ততটাই। তবে কয়েক জায়গায় আরেকটু বিশদ বিবরণ থাকলে ভালো হতো। কিছু কিছু শব্দ ঘুরেফিরে বারবার এসেছে, বিকল্প শব্দ ব্যবহার করা যেত। যারা প্যারেন্টিং বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী তারা শাইখ আব্দুল করীম বাক্কার এর ‘আদর্শ পরিবার সিরিজ’ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘প্যারেন্টিং সন্তান প্রতিপালনে কলা-কৌশল’, ড. হাসসান শামসি পাশা রচিত ‘প্যারেন্টিং এর আধুনিক পাঠশালা’ এই বইগুলো পড়তে পারেন। ✲ সারকথা : ‘শিশুর মননে ঈমান’ বইটি আপনাকে কীভাবে মুসলিম হবেন তা শেখাবে না; বরং প্রকৃত মুমিন হয়ে ওঠার দীক্ষা দিবে। কথার ফুলঝুরিতে মোহিত না করে, কোমলমতি শিশুদের হৃদয়-কাননে ঈমান ও ইহসানের মুক্তো পুরে দেওয়ার কৌশল জানাবে। আমাদের সব ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য হলেই, ঐশী ছায়া ও ছোঁয়ায় ঈমানের আস্তিন আকাশ ছোঁবে। আমরা ভবিষ্যতে বাচ্চাদের যেমন মানুষ হিসেবে দেখতে চাই; আমাদের নিজেদেরও উচিত ঠিক সেরকম হওয়া। সন্তানের প্রতি আজকে উন্মনা থাকা মানে, ভবিষ্যৎ ব্যর্থতার খাল কাটা। তাই নিজের ঈমান আগে ঝালাই করে নিতে চাইলে, পড়ে ফেলুন ‘শিশুর মননে ঈমান’ বইট.া
An Najahah Shop
Category List
All products

বইয়ের নাম : শিশুর মননে ঈমান
লেখকের নাম : ড. আইশা হামদান
প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন
শিশুর মননে ঈমান : যে বইটি প্রত্যেক পিতামাতার পড়া উচিত
✲ আভাষ :
বিশ্বায়নের এই যুগে প্রত্যেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের উন্নত ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে যতটা না উদ্যোগী; তারচেয়ে বেশি উদাসীন, তাদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করার ব্যাপারে। সন্তান পার্থিব শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নতি লাভ করলেও, ধর্মীয় বিষয়ে থাকে অজ্ঞ। ফলে, নানা জাগতিক চিন্তা-চেতনা তাকে সর্বদা গ্রাস করে রাখে। রঙিন দুনিয়ার রূপ-ঐশ্বর্যের মোহে পড়ে পদে পদে সে পথ হারায়। অথচ বাবা-মায়ের এই আদরের সন্তানটিই হতে পারে তাদের জান্নাত বা জাহান্নামে কারণ।
কখনো কি ভেবে দেখেছি, আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করি ঠিকই; কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্বগুলো কী ঠিকঠাক পালন করি? নিজের কাজ ঠিকমতো না করে, অন্যের কাছ থেকে প্রতিদান আশা করা কি ঠিক?
আমাদের উচিত, সন্তানদের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। মানুষের চিন্তা ও কাজের গতি ঠিক করে দেয় তার হৃদয়ের গভীরের ঈমান বা বিশ্বাস। এজন্য শিশুর মনে জ্বেলে দিতে হবে ঈমানের আলোকবর্তিকা। দেখাতে হবে সত্য ও সুন্দরের পথ। তাকে জানাতে হবে আল্লাহ, ফেরেশতা, নবি-রাসূল, আসমানি কিতাব, মৃত্যু, কিয়ামত ও পরকাল সম্পর্কে।
সন্তানকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে, আসন্ন জীবনের বড় বড় দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ পালনের জন্য। ঔদাসীন্য দূর করে প্রত্যেক বাবা-মা যখন দায়িত্বশীল হবে; ঠিক তখন ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান আরও একটি প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এই শিক্ষণীয় কথাগুলোই উঠে এসেছে Nurturing Eman in children নামক অনবদ্য বইটিতে।
ড. আইশা হামদান পশ্চিমা সমাজের কথা মাথায় রেখে বইটি রচনা করলেও, মূলত সবার জন্যই অবশ্যপাঠ্য। ১২০ পৃষ্ঠার বইটি মাসুদ শরীফ ও সারাহ ইসলাম কর্তৃক অনূদিত হয়ে, মলাটবদ্ধ হয়েছে ‘শিশুর মননে ঈমান’ শিরোনামে।
✲ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা :
আলোচ্য গ্রন্থটি মোট ১৬ টি পরিচ্ছেদ ও অনেকগুলো উপ-পরিচ্ছেদে বিভক্ত। এতে প্রকাশক, সম্পাদক ও লেখিকার বাণীর পর আছে দীর্ঘ সূচিপত্র। এরপর ঈমানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনার মাধ্যমে শুরু করা হয় মূলপাঠ।
সন্তান প্রতিপালনের আগে যে বিষয়গুলো জানা একান্ত জরুরি, সেগুলো নিয়ে প্রথমে কিছুটা আলোকপাত করা হয়। অতঃপর গুরুত্বারোপ করা হয় জীবনসঙ্গী নির্বাচন, বিবাহ সম্পাদন ও পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলার ব্যাপারে। একজন মুসলিমের বাড়ির পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত, কীভাবে ঘরকে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করা যায়, তাও বলা হয়। এরপর ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়, বাবা-মা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ।
সন্তানের আত্মিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ক্ষেত্রে মায়েদের পাশাপাশি বাবাদেরও কাজ করতে হয়। আধুনিক গবেষণামতে সন্তান প্রতিপালনে বাবাদের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে বইটাতে। আমরা জানি, ইসলামে নারীদের জন্য চাকরিতে অংশগ্রহণ করা একেবারে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু সেজন্য তাকে কিছু শর্ত ও নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। খেয়াল রাখতে হয়, ব্যস্ততার কারণে যেন স্বামী-সন্তান ও সংসারের ক্ষতি না হয়। এই জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো খুব দক্ষতার সাথে উঠে এসেছে লেখিকার কলমে।
গুরুগম্ভীর আলোচনার চেয়ে, বর্ণনামূলক কাহিনি মানুষের মনে গেঁথে যায় সহজেই। বইটিতে সেই কৌশলটিই ব্যবহার করা হয়েছে। বর্ণনার পাশাপাশি সুন্দর উদাহরণ বইটার গুরুত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটি টপিক সাজানো হয়েছে কুরআন-হাদিসে বর্ণিত ঈমানের মৌলিক শর্তগুলো প্রাধান্য দিয়ে। বিভিন্ন রুপক উপমা দিয়ে গল্প-কথা ও কাজের ছলে কীভাবে সেগুলো বাচ্চাকে শেখানো যায়, করা হয়েছে তার প্রাকটিক্যাল আলোচনা। এ বিষয়টি আমার কাছে বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক মনে হয়েছে।
সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা খুব কঠিন কাজ। সেজন্য মানসিক পরিশ্রমের পাশাপাশি করতে হয় দৈহিক খাটাখাটুনি। অনেককিছু বিসর্জন দিয়ে ধৈর্যের সহিত লেগে থাকতে হয়। অথচ এ নিয়ে আমাদের না আছে বিশেষ কোনো পড়াশোনা বা প্রস্তুতি। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ করবে। বইয়ের কথাগুলো অনুসরণ করলে, বাবা-মা-সন্তান মিলে তৈরি হবে এক সুস্থ ও সুখী পরিবার। স্নেহ, মায়া-মমতার বন্ধনে সৃষ্টি হবে শান্তিময় স্বপ্নিল পরিবেশ।
বইটা পড়তে পড়তে ছেলেবেলার একটা নিখুঁত ছবি ভেসে ওঠে হৃদয়ের ফ্রেমে। ইশ! আমাদের বাবা-মায়েরও যদি বইটি পড়া থাকতো, তারাও যদি এমনভাবে আমাদের শেখাতেন, কতই না ভালো হতো!
লেখিকা একজন কনভার্টেড মুসলিমা হয়েও মুসলিম সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। মুসলিম পরিবারগুলো আজ পারভাঙ্গা নদীর মতো ভেঙে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মরণের খেয়াঘাটে। একটি ইসলামি পরিবার গঠনে ধর্মীয় জ্ঞান যে কতখানি অপরিহার্য, তা এই মূল্যবান বইয়ের পাঠকমাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন। বইটা সংকলন করতে গিয়ে লেখিকা অনেক গবেষণা ও পরিশ্রম করেছেন, যার স্পষ্ট ছাপ ফুটে ওঠে তার জ্ঞানগর্ভ লেখনিতে।
সর্বোপরি, এ বইটি শিশুদের জন্য নয়; বরং অভিভাবকদের জন্য। সদ্য বাবা-মা হওয়াদের জন্য হাইলি রেকমেন্ডেড।
✲ প্রোডাকশন, অনুবাদ ও অন্যান্য :
দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ ও চিত্তাকর্ষক শিরোনামে ফুটে উঠেছে বইয়ের মূল থিম। অর্থবহ প্রচ্ছদটি এঁকেছে সমকালীন গ্রাফিক্স টিম। ফ্ল্যাপের লেখাগুলোও খুব সুন্দর। যদিও প্রথম মুদ্রণের বই, তবুও আমি কোনো টাইপিং মিসটেক প্রত্যক্ষ করিনি। তবে বানানের বিষয়ে কিছুটা আপত্তির জায়গা রয়ে যায়। ভেতরের অঙ্গসজ্জা, লেখার ফন্ট সাইজ ও স্পেস যুৎসই ছিল। বইয়ের শেষে পাঠকের জন্য রাখা হয়েছে নোট পাতা। ১৭৬ টাকা মুদ্রিত মূল্যের গ্রন্থটি পেপারব্যাক আকারে পাওয়া যায়। তবে গুরুত্বের বিচারে হার্ডকভারে বাঁধাই করা থাকলে ভালো হতো।
অত্যন্ত যত্নের সহিত এমন মানসম্পন্ন লেখা উপহার দেওয়ার জন্য; অনুবাদক দ্বয়কে অজস্র ধন্যবাদ। সুখপাঠ্য শব্দের গাঁথুনিতে বর্ণনার গতি এবং ভাষার ভাব ও প্রাঞ্জলতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকখানি। এরকম সহজ, সাবলীল ও ঝরঝরে অনুবাদের বই খুব কমই চোখে পড়ে। সম্পাদনাও হয়েছে বেশ দারুণ। খাপছাড়া কিছু নয়, একদম ধারাবাহিক বর্ণনা। ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনীয় টিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। যারা অ্যাকাডেমিক ধাঁচের বইয়ে মনোযোগ রাখতে পারেন না, তারাও স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ে ফেলতে পারবেন।
বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তুলতে যতটা সংক্ষিপ্ত করা যায়, বইয়ের কলেবর ঠিক ততটাই। তবে কয়েক জায়গায় আরেকটু বিশদ বিবরণ থাকলে ভালো হতো। কিছু কিছু শব্দ ঘুরেফিরে বারবার এসেছে, বিকল্প শব্দ ব্যবহার করা যেত। যারা প্যারেন্টিং বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী তারা শাইখ আব্দুল করীম বাক্কার এর ‘আদর্শ পরিবার সিরিজ’ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘প্যারেন্টিং সন্তান প্রতিপালনে কলা-কৌশল’, ড. হাসসান শামসি পাশা রচিত ‘প্যারেন্টিং এর আধুনিক পাঠশালা’ এই বইগুলো পড়তে পারেন।
✲ সারকথা :
‘শিশুর মননে ঈমান’ বইটি আপনাকে কীভাবে মুসলিম হবেন তা শেখাবে না; বরং প্রকৃত মুমিন হয়ে ওঠার দীক্ষা দিবে। কথার ফুলঝুরিতে মোহিত না করে, কোমলমতি শিশুদের হৃদয়-কাননে ঈমান ও ইহসানের মুক্তো পুরে দেওয়ার কৌশল জানাবে। আমাদের সব ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য হলেই, ঐশী ছায়া ও ছোঁয়ায় ঈমানের আস্তিন আকাশ ছোঁবে।
আমরা ভবিষ্যতে বাচ্চাদের যেমন মানুষ হিসেবে দেখতে চাই; আমাদের নিজেদেরও উচিত ঠিক সেরকম হওয়া। সন্তানের প্রতি আজকে উন্মনা থাকা মানে, ভবিষ্যৎ ব্যর্থতার খাল কাটা। তাই নিজের ঈমান আগে ঝালাই করে নিতে চাইলে, পড়ে ফেলুন ‘শিশুর মননে ঈমান’ বইট.া
লেখকের নাম : ড. আইশা হামদান
প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন
শিশুর মননে ঈমান : যে বইটি প্রত্যেক পিতামাতার পড়া উচিত
✲ আভাষ :
বিশ্বায়নের এই যুগে প্রত্যেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের উন্নত ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে যতটা না উদ্যোগী; তারচেয়ে বেশি উদাসীন, তাদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করার ব্যাপারে। সন্তান পার্থিব শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নতি লাভ করলেও, ধর্মীয় বিষয়ে থাকে অজ্ঞ। ফলে, নানা জাগতিক চিন্তা-চেতনা তাকে সর্বদা গ্রাস করে রাখে। রঙিন দুনিয়ার রূপ-ঐশ্বর্যের মোহে পড়ে পদে পদে সে পথ হারায়। অথচ বাবা-মায়ের এই আদরের সন্তানটিই হতে পারে তাদের জান্নাত বা জাহান্নামে কারণ।
কখনো কি ভেবে দেখেছি, আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করি ঠিকই; কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্বগুলো কী ঠিকঠাক পালন করি? নিজের কাজ ঠিকমতো না করে, অন্যের কাছ থেকে প্রতিদান আশা করা কি ঠিক?
আমাদের উচিত, সন্তানদের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। মানুষের চিন্তা ও কাজের গতি ঠিক করে দেয় তার হৃদয়ের গভীরের ঈমান বা বিশ্বাস। এজন্য শিশুর মনে জ্বেলে দিতে হবে ঈমানের আলোকবর্তিকা। দেখাতে হবে সত্য ও সুন্দরের পথ। তাকে জানাতে হবে আল্লাহ, ফেরেশতা, নবি-রাসূল, আসমানি কিতাব, মৃত্যু, কিয়ামত ও পরকাল সম্পর্কে।
সন্তানকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে, আসন্ন জীবনের বড় বড় দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ পালনের জন্য। ঔদাসীন্য দূর করে প্রত্যেক বাবা-মা যখন দায়িত্বশীল হবে; ঠিক তখন ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান আরও একটি প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এই শিক্ষণীয় কথাগুলোই উঠে এসেছে Nurturing Eman in children নামক অনবদ্য বইটিতে।
ড. আইশা হামদান পশ্চিমা সমাজের কথা মাথায় রেখে বইটি রচনা করলেও, মূলত সবার জন্যই অবশ্যপাঠ্য। ১২০ পৃষ্ঠার বইটি মাসুদ শরীফ ও সারাহ ইসলাম কর্তৃক অনূদিত হয়ে, মলাটবদ্ধ হয়েছে ‘শিশুর মননে ঈমান’ শিরোনামে।
✲ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা :
আলোচ্য গ্রন্থটি মোট ১৬ টি পরিচ্ছেদ ও অনেকগুলো উপ-পরিচ্ছেদে বিভক্ত। এতে প্রকাশক, সম্পাদক ও লেখিকার বাণীর পর আছে দীর্ঘ সূচিপত্র। এরপর ঈমানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনার মাধ্যমে শুরু করা হয় মূলপাঠ।
সন্তান প্রতিপালনের আগে যে বিষয়গুলো জানা একান্ত জরুরি, সেগুলো নিয়ে প্রথমে কিছুটা আলোকপাত করা হয়। অতঃপর গুরুত্বারোপ করা হয় জীবনসঙ্গী নির্বাচন, বিবাহ সম্পাদন ও পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলার ব্যাপারে। একজন মুসলিমের বাড়ির পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত, কীভাবে ঘরকে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করা যায়, তাও বলা হয়। এরপর ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়, বাবা-মা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ।
সন্তানের আত্মিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ক্ষেত্রে মায়েদের পাশাপাশি বাবাদেরও কাজ করতে হয়। আধুনিক গবেষণামতে সন্তান প্রতিপালনে বাবাদের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে বইটাতে। আমরা জানি, ইসলামে নারীদের জন্য চাকরিতে অংশগ্রহণ করা একেবারে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু সেজন্য তাকে কিছু শর্ত ও নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। খেয়াল রাখতে হয়, ব্যস্ততার কারণে যেন স্বামী-সন্তান ও সংসারের ক্ষতি না হয়। এই জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো খুব দক্ষতার সাথে উঠে এসেছে লেখিকার কলমে।
গুরুগম্ভীর আলোচনার চেয়ে, বর্ণনামূলক কাহিনি মানুষের মনে গেঁথে যায় সহজেই। বইটিতে সেই কৌশলটিই ব্যবহার করা হয়েছে। বর্ণনার পাশাপাশি সুন্দর উদাহরণ বইটার গুরুত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটি টপিক সাজানো হয়েছে কুরআন-হাদিসে বর্ণিত ঈমানের মৌলিক শর্তগুলো প্রাধান্য দিয়ে। বিভিন্ন রুপক উপমা দিয়ে গল্প-কথা ও কাজের ছলে কীভাবে সেগুলো বাচ্চাকে শেখানো যায়, করা হয়েছে তার প্রাকটিক্যাল আলোচনা। এ বিষয়টি আমার কাছে বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক মনে হয়েছে।
সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা খুব কঠিন কাজ। সেজন্য মানসিক পরিশ্রমের পাশাপাশি করতে হয় দৈহিক খাটাখাটুনি। অনেককিছু বিসর্জন দিয়ে ধৈর্যের সহিত লেগে থাকতে হয়। অথচ এ নিয়ে আমাদের না আছে বিশেষ কোনো পড়াশোনা বা প্রস্তুতি। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ করবে। বইয়ের কথাগুলো অনুসরণ করলে, বাবা-মা-সন্তান মিলে তৈরি হবে এক সুস্থ ও সুখী পরিবার। স্নেহ, মায়া-মমতার বন্ধনে সৃষ্টি হবে শান্তিময় স্বপ্নিল পরিবেশ।
বইটা পড়তে পড়তে ছেলেবেলার একটা নিখুঁত ছবি ভেসে ওঠে হৃদয়ের ফ্রেমে। ইশ! আমাদের বাবা-মায়েরও যদি বইটি পড়া থাকতো, তারাও যদি এমনভাবে আমাদের শেখাতেন, কতই না ভালো হতো!
লেখিকা একজন কনভার্টেড মুসলিমা হয়েও মুসলিম সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। মুসলিম পরিবারগুলো আজ পারভাঙ্গা নদীর মতো ভেঙে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মরণের খেয়াঘাটে। একটি ইসলামি পরিবার গঠনে ধর্মীয় জ্ঞান যে কতখানি অপরিহার্য, তা এই মূল্যবান বইয়ের পাঠকমাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন। বইটা সংকলন করতে গিয়ে লেখিকা অনেক গবেষণা ও পরিশ্রম করেছেন, যার স্পষ্ট ছাপ ফুটে ওঠে তার জ্ঞানগর্ভ লেখনিতে।
সর্বোপরি, এ বইটি শিশুদের জন্য নয়; বরং অভিভাবকদের জন্য। সদ্য বাবা-মা হওয়াদের জন্য হাইলি রেকমেন্ডেড।
✲ প্রোডাকশন, অনুবাদ ও অন্যান্য :
দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ ও চিত্তাকর্ষক শিরোনামে ফুটে উঠেছে বইয়ের মূল থিম। অর্থবহ প্রচ্ছদটি এঁকেছে সমকালীন গ্রাফিক্স টিম। ফ্ল্যাপের লেখাগুলোও খুব সুন্দর। যদিও প্রথম মুদ্রণের বই, তবুও আমি কোনো টাইপিং মিসটেক প্রত্যক্ষ করিনি। তবে বানানের বিষয়ে কিছুটা আপত্তির জায়গা রয়ে যায়। ভেতরের অঙ্গসজ্জা, লেখার ফন্ট সাইজ ও স্পেস যুৎসই ছিল। বইয়ের শেষে পাঠকের জন্য রাখা হয়েছে নোট পাতা। ১৭৬ টাকা মুদ্রিত মূল্যের গ্রন্থটি পেপারব্যাক আকারে পাওয়া যায়। তবে গুরুত্বের বিচারে হার্ডকভারে বাঁধাই করা থাকলে ভালো হতো।
অত্যন্ত যত্নের সহিত এমন মানসম্পন্ন লেখা উপহার দেওয়ার জন্য; অনুবাদক দ্বয়কে অজস্র ধন্যবাদ। সুখপাঠ্য শব্দের গাঁথুনিতে বর্ণনার গতি এবং ভাষার ভাব ও প্রাঞ্জলতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকখানি। এরকম সহজ, সাবলীল ও ঝরঝরে অনুবাদের বই খুব কমই চোখে পড়ে। সম্পাদনাও হয়েছে বেশ দারুণ। খাপছাড়া কিছু নয়, একদম ধারাবাহিক বর্ণনা। ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনীয় টিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। যারা অ্যাকাডেমিক ধাঁচের বইয়ে মনোযোগ রাখতে পারেন না, তারাও স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ে ফেলতে পারবেন।
বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তুলতে যতটা সংক্ষিপ্ত করা যায়, বইয়ের কলেবর ঠিক ততটাই। তবে কয়েক জায়গায় আরেকটু বিশদ বিবরণ থাকলে ভালো হতো। কিছু কিছু শব্দ ঘুরেফিরে বারবার এসেছে, বিকল্প শব্দ ব্যবহার করা যেত। যারা প্যারেন্টিং বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী তারা শাইখ আব্দুল করীম বাক্কার এর ‘আদর্শ পরিবার সিরিজ’ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘প্যারেন্টিং সন্তান প্রতিপালনে কলা-কৌশল’, ড. হাসসান শামসি পাশা রচিত ‘প্যারেন্টিং এর আধুনিক পাঠশালা’ এই বইগুলো পড়তে পারেন।
✲ সারকথা :
‘শিশুর মননে ঈমান’ বইটি আপনাকে কীভাবে মুসলিম হবেন তা শেখাবে না; বরং প্রকৃত মুমিন হয়ে ওঠার দীক্ষা দিবে। কথার ফুলঝুরিতে মোহিত না করে, কোমলমতি শিশুদের হৃদয়-কাননে ঈমান ও ইহসানের মুক্তো পুরে দেওয়ার কৌশল জানাবে। আমাদের সব ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য হলেই, ঐশী ছায়া ও ছোঁয়ায় ঈমানের আস্তিন আকাশ ছোঁবে।
আমরা ভবিষ্যতে বাচ্চাদের যেমন মানুষ হিসেবে দেখতে চাই; আমাদের নিজেদেরও উচিত ঠিক সেরকম হওয়া। সন্তানের প্রতি আজকে উন্মনা থাকা মানে, ভবিষ্যৎ ব্যর্থতার খাল কাটা। তাই নিজের ঈমান আগে ঝালাই করে নিতে চাইলে, পড়ে ফেলুন ‘শিশুর মননে ঈমান’ বইট.া
শিশুর মননে ঈমান
120 BDT176 BDTSave 56 BDT
বইয়ের নাম : শিশুর মননে ঈমান
লেখকের নাম : ড. আইশা হামদান
প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন
শিশুর মননে ঈমান : যে বইটি প্রত্যেক পিতামাতার পড়া উচিত
✲ আভাষ :
বিশ্বায়নের এই যুগে প্রত্যেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের উন্নত ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে যতটা না উদ্যোগী; তারচেয়ে বেশি উদাসীন, তাদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করার ব্যাপারে। সন্তান পার্থিব শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নতি লাভ করলেও, ধর্মীয় বিষয়ে থাকে অজ্ঞ। ফলে, নানা জাগতিক চিন্তা-চেতনা তাকে সর্বদা গ্রাস করে রাখে। রঙিন দুনিয়ার রূপ-ঐশ্বর্যের মোহে পড়ে পদে পদে সে পথ হারায়। অথচ বাবা-মায়ের এই আদরের সন্তানটিই হতে পারে তাদের জান্নাত বা জাহান্নামে কারণ।
কখনো কি ভেবে দেখেছি, আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করি ঠিকই; কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্বগুলো কী ঠিকঠাক পালন করি? নিজের কাজ ঠিকমতো না করে, অন্যের কাছ থেকে প্রতিদান আশা করা কি ঠিক?
আমাদের উচিত, সন্তানদের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। মানুষের চিন্তা ও কাজের গতি ঠিক করে দেয় তার হৃদয়ের গভীরের ঈমান বা বিশ্বাস। এজন্য শিশুর মনে জ্বেলে দিতে হবে ঈমানের আলোকবর্তিকা। দেখাতে হবে সত্য ও সুন্দরের পথ। তাকে জানাতে হবে আল্লাহ, ফেরেশতা, নবি-রাসূল, আসমানি কিতাব, মৃত্যু, কিয়ামত ও পরকাল সম্পর্কে।
সন্তানকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে, আসন্ন জীবনের বড় বড় দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ পালনের জন্য। ঔদাসীন্য দূর করে প্রত্যেক বাবা-মা যখন দায়িত্বশীল হবে; ঠিক তখন ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান আরও একটি প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এই শিক্ষণীয় কথাগুলোই উঠে এসেছে Nurturing Eman in children নামক অনবদ্য বইটিতে।
ড. আইশা হামদান পশ্চিমা সমাজের কথা মাথায় রেখে বইটি রচনা করলেও, মূলত সবার জন্যই অবশ্যপাঠ্য। ১২০ পৃষ্ঠার বইটি মাসুদ শরীফ ও সারাহ ইসলাম কর্তৃক অনূদিত হয়ে, মলাটবদ্ধ হয়েছে ‘শিশুর মননে ঈমান’ শিরোনামে।
✲ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা :
আলোচ্য গ্রন্থটি মোট ১৬ টি পরিচ্ছেদ ও অনেকগুলো উপ-পরিচ্ছেদে বিভক্ত। এতে প্রকাশক, সম্পাদক ও লেখিকার বাণীর পর আছে দীর্ঘ সূচিপত্র। এরপর ঈমানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনার মাধ্যমে শুরু করা হয় মূলপাঠ।
সন্তান প্রতিপালনের আগে যে বিষয়গুলো জানা একান্ত জরুরি, সেগুলো নিয়ে প্রথমে কিছুটা আলোকপাত করা হয়। অতঃপর গুরুত্বারোপ করা হয় জীবনসঙ্গী নির্বাচন, বিবাহ সম্পাদন ও পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলার ব্যাপারে। একজন মুসলিমের বাড়ির পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত, কীভাবে ঘরকে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করা যায়, তাও বলা হয়। এরপর ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়, বাবা-মা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ।
সন্তানের আত্মিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ক্ষেত্রে মায়েদের পাশাপাশি বাবাদেরও কাজ করতে হয়। আধুনিক গবেষণামতে সন্তান প্রতিপালনে বাবাদের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে বইটাতে। আমরা জানি, ইসলামে নারীদের জন্য চাকরিতে অংশগ্রহণ করা একেবারে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু সেজন্য তাকে কিছু শর্ত ও নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। খেয়াল রাখতে হয়, ব্যস্ততার কারণে যেন স্বামী-সন্তান ও সংসারের ক্ষতি না হয়। এই জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো খুব দক্ষতার সাথে উঠে এসেছে লেখিকার কলমে।
গুরুগম্ভীর আলোচনার চেয়ে, বর্ণনামূলক কাহিনি মানুষের মনে গেঁথে যায় সহজেই। বইটিতে সেই কৌশলটিই ব্যবহার করা হয়েছে। বর্ণনার পাশাপাশি সুন্দর উদাহরণ বইটার গুরুত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটি টপিক সাজানো হয়েছে কুরআন-হাদিসে বর্ণিত ঈমানের মৌলিক শর্তগুলো প্রাধান্য দিয়ে। বিভিন্ন রুপক উপমা দিয়ে গল্প-কথা ও কাজের ছলে কীভাবে সেগুলো বাচ্চাকে শেখানো যায়, করা হয়েছে তার প্রাকটিক্যাল আলোচনা। এ বিষয়টি আমার কাছে বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক মনে হয়েছে।
সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা খুব কঠিন কাজ। সেজন্য মানসিক পরিশ্রমের পাশাপাশি করতে হয় দৈহিক খাটাখাটুনি। অনেককিছু বিসর্জন দিয়ে ধৈর্যের সহিত লেগে থাকতে হয়। অথচ এ নিয়ে আমাদের না আছে বিশেষ কোনো পড়াশোনা বা প্রস্তুতি। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ করবে। বইয়ের কথাগুলো অনুসরণ করলে, বাবা-মা-সন্তান মিলে তৈরি হবে এক সুস্থ ও সুখী পরিবার। স্নেহ, মায়া-মমতার বন্ধনে সৃষ্টি হবে শান্তিময় স্বপ্নিল পরিবেশ।
বইটা পড়তে পড়তে ছেলেবেলার একটা নিখুঁত ছবি ভেসে ওঠে হৃদয়ের ফ্রেমে। ইশ! আমাদের বাবা-মায়েরও যদি বইটি পড়া থাকতো, তারাও যদি এমনভাবে আমাদের শেখাতেন, কতই না ভালো হতো!
লেখিকা একজন কনভার্টেড মুসলিমা হয়েও মুসলিম সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। মুসলিম পরিবারগুলো আজ পারভাঙ্গা নদীর মতো ভেঙে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মরণের খেয়াঘাটে। একটি ইসলামি পরিবার গঠনে ধর্মীয় জ্ঞান যে কতখানি অপরিহার্য, তা এই মূল্যবান বইয়ের পাঠকমাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন। বইটা সংকলন করতে গিয়ে লেখিকা অনেক গবেষণা ও পরিশ্রম করেছেন, যার স্পষ্ট ছাপ ফুটে ওঠে তার জ্ঞানগর্ভ লেখনিতে।
সর্বোপরি, এ বইটি শিশুদের জন্য নয়; বরং অভিভাবকদের জন্য। সদ্য বাবা-মা হওয়াদের জন্য হাইলি রেকমেন্ডেড।
✲ প্রোডাকশন, অনুবাদ ও অন্যান্য :
দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ ও চিত্তাকর্ষক শিরোনামে ফুটে উঠেছে বইয়ের মূল থিম। অর্থবহ প্রচ্ছদটি এঁকেছে সমকালীন গ্রাফিক্স টিম। ফ্ল্যাপের লেখাগুলোও খুব সুন্দর। যদিও প্রথম মুদ্রণের বই, তবুও আমি কোনো টাইপিং মিসটেক প্রত্যক্ষ করিনি। তবে বানানের বিষয়ে কিছুটা আপত্তির জায়গা রয়ে যায়। ভেতরের অঙ্গসজ্জা, লেখার ফন্ট সাইজ ও স্পেস যুৎসই ছিল। বইয়ের শেষে পাঠকের জন্য রাখা হয়েছে নোট পাতা। ১৭৬ টাকা মুদ্রিত মূল্যের গ্রন্থটি পেপারব্যাক আকারে পাওয়া যায়। তবে গুরুত্বের বিচারে হার্ডকভারে বাঁধাই করা থাকলে ভালো হতো।
অত্যন্ত যত্নের সহিত এমন মানসম্পন্ন লেখা উপহার দেওয়ার জন্য; অনুবাদক দ্বয়কে অজস্র ধন্যবাদ। সুখপাঠ্য শব্দের গাঁথুনিতে বর্ণনার গতি এবং ভাষার ভাব ও প্রাঞ্জলতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকখানি। এরকম সহজ, সাবলীল ও ঝরঝরে অনুবাদের বই খুব কমই চোখে পড়ে। সম্পাদনাও হয়েছে বেশ দারুণ। খাপছাড়া কিছু নয়, একদম ধারাবাহিক বর্ণনা। ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনীয় টিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। যারা অ্যাকাডেমিক ধাঁচের বইয়ে মনোযোগ রাখতে পারেন না, তারাও স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ে ফেলতে পারবেন।
বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তুলতে যতটা সংক্ষিপ্ত করা যায়, বইয়ের কলেবর ঠিক ততটাই। তবে কয়েক জায়গায় আরেকটু বিশদ বিবরণ থাকলে ভালো হতো। কিছু কিছু শব্দ ঘুরেফিরে বারবার এসেছে, বিকল্প শব্দ ব্যবহার করা যেত। যারা প্যারেন্টিং বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী তারা শাইখ আব্দুল করীম বাক্কার এর ‘আদর্শ পরিবার সিরিজ’ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘প্যারেন্টিং সন্তান প্রতিপালনে কলা-কৌশল’, ড. হাসসান শামসি পাশা রচিত ‘প্যারেন্টিং এর আধুনিক পাঠশালা’ এই বইগুলো পড়তে পারেন।
✲ সারকথা :
‘শিশুর মননে ঈমান’ বইটি আপনাকে কীভাবে মুসলিম হবেন তা শেখাবে না; বরং প্রকৃত মুমিন হয়ে ওঠার দীক্ষা দিবে। কথার ফুলঝুরিতে মোহিত না করে, কোমলমতি শিশুদের হৃদয়-কাননে ঈমান ও ইহসানের মুক্তো পুরে দেওয়ার কৌশল জানাবে। আমাদের সব ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য হলেই, ঐশী ছায়া ও ছোঁয়ায় ঈমানের আস্তিন আকাশ ছোঁবে।
আমরা ভবিষ্যতে বাচ্চাদের যেমন মানুষ হিসেবে দেখতে চাই; আমাদের নিজেদেরও উচিত ঠিক সেরকম হওয়া। সন্তানের প্রতি আজকে উন্মনা থাকা মানে, ভবিষ্যৎ ব্যর্থতার খাল কাটা। তাই নিজের ঈমান আগে ঝালাই করে নিতে চাইলে, পড়ে ফেলুন ‘শিশুর মননে ঈমান’ বইট.া
লেখকের নাম : ড. আইশা হামদান
প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন
শিশুর মননে ঈমান : যে বইটি প্রত্যেক পিতামাতার পড়া উচিত
✲ আভাষ :
বিশ্বায়নের এই যুগে প্রত্যেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের উন্নত ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে যতটা না উদ্যোগী; তারচেয়ে বেশি উদাসীন, তাদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করার ব্যাপারে। সন্তান পার্থিব শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নতি লাভ করলেও, ধর্মীয় বিষয়ে থাকে অজ্ঞ। ফলে, নানা জাগতিক চিন্তা-চেতনা তাকে সর্বদা গ্রাস করে রাখে। রঙিন দুনিয়ার রূপ-ঐশ্বর্যের মোহে পড়ে পদে পদে সে পথ হারায়। অথচ বাবা-মায়ের এই আদরের সন্তানটিই হতে পারে তাদের জান্নাত বা জাহান্নামে কারণ।
কখনো কি ভেবে দেখেছি, আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করি ঠিকই; কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্বগুলো কী ঠিকঠাক পালন করি? নিজের কাজ ঠিকমতো না করে, অন্যের কাছ থেকে প্রতিদান আশা করা কি ঠিক?
আমাদের উচিত, সন্তানদের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। মানুষের চিন্তা ও কাজের গতি ঠিক করে দেয় তার হৃদয়ের গভীরের ঈমান বা বিশ্বাস। এজন্য শিশুর মনে জ্বেলে দিতে হবে ঈমানের আলোকবর্তিকা। দেখাতে হবে সত্য ও সুন্দরের পথ। তাকে জানাতে হবে আল্লাহ, ফেরেশতা, নবি-রাসূল, আসমানি কিতাব, মৃত্যু, কিয়ামত ও পরকাল সম্পর্কে।
সন্তানকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে, আসন্ন জীবনের বড় বড় দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ পালনের জন্য। ঔদাসীন্য দূর করে প্রত্যেক বাবা-মা যখন দায়িত্বশীল হবে; ঠিক তখন ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান আরও একটি প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এই শিক্ষণীয় কথাগুলোই উঠে এসেছে Nurturing Eman in children নামক অনবদ্য বইটিতে।
ড. আইশা হামদান পশ্চিমা সমাজের কথা মাথায় রেখে বইটি রচনা করলেও, মূলত সবার জন্যই অবশ্যপাঠ্য। ১২০ পৃষ্ঠার বইটি মাসুদ শরীফ ও সারাহ ইসলাম কর্তৃক অনূদিত হয়ে, মলাটবদ্ধ হয়েছে ‘শিশুর মননে ঈমান’ শিরোনামে।
✲ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা :
আলোচ্য গ্রন্থটি মোট ১৬ টি পরিচ্ছেদ ও অনেকগুলো উপ-পরিচ্ছেদে বিভক্ত। এতে প্রকাশক, সম্পাদক ও লেখিকার বাণীর পর আছে দীর্ঘ সূচিপত্র। এরপর ঈমানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনার মাধ্যমে শুরু করা হয় মূলপাঠ।
সন্তান প্রতিপালনের আগে যে বিষয়গুলো জানা একান্ত জরুরি, সেগুলো নিয়ে প্রথমে কিছুটা আলোকপাত করা হয়। অতঃপর গুরুত্বারোপ করা হয় জীবনসঙ্গী নির্বাচন, বিবাহ সম্পাদন ও পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলার ব্যাপারে। একজন মুসলিমের বাড়ির পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত, কীভাবে ঘরকে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করা যায়, তাও বলা হয়। এরপর ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়, বাবা-মা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ।
সন্তানের আত্মিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ক্ষেত্রে মায়েদের পাশাপাশি বাবাদেরও কাজ করতে হয়। আধুনিক গবেষণামতে সন্তান প্রতিপালনে বাবাদের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে বইটাতে। আমরা জানি, ইসলামে নারীদের জন্য চাকরিতে অংশগ্রহণ করা একেবারে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু সেজন্য তাকে কিছু শর্ত ও নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। খেয়াল রাখতে হয়, ব্যস্ততার কারণে যেন স্বামী-সন্তান ও সংসারের ক্ষতি না হয়। এই জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো খুব দক্ষতার সাথে উঠে এসেছে লেখিকার কলমে।
গুরুগম্ভীর আলোচনার চেয়ে, বর্ণনামূলক কাহিনি মানুষের মনে গেঁথে যায় সহজেই। বইটিতে সেই কৌশলটিই ব্যবহার করা হয়েছে। বর্ণনার পাশাপাশি সুন্দর উদাহরণ বইটার গুরুত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটি টপিক সাজানো হয়েছে কুরআন-হাদিসে বর্ণিত ঈমানের মৌলিক শর্তগুলো প্রাধান্য দিয়ে। বিভিন্ন রুপক উপমা দিয়ে গল্প-কথা ও কাজের ছলে কীভাবে সেগুলো বাচ্চাকে শেখানো যায়, করা হয়েছে তার প্রাকটিক্যাল আলোচনা। এ বিষয়টি আমার কাছে বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক মনে হয়েছে।
সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা খুব কঠিন কাজ। সেজন্য মানসিক পরিশ্রমের পাশাপাশি করতে হয় দৈহিক খাটাখাটুনি। অনেককিছু বিসর্জন দিয়ে ধৈর্যের সহিত লেগে থাকতে হয়। অথচ এ নিয়ে আমাদের না আছে বিশেষ কোনো পড়াশোনা বা প্রস্তুতি। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ করবে। বইয়ের কথাগুলো অনুসরণ করলে, বাবা-মা-সন্তান মিলে তৈরি হবে এক সুস্থ ও সুখী পরিবার। স্নেহ, মায়া-মমতার বন্ধনে সৃষ্টি হবে শান্তিময় স্বপ্নিল পরিবেশ।
বইটা পড়তে পড়তে ছেলেবেলার একটা নিখুঁত ছবি ভেসে ওঠে হৃদয়ের ফ্রেমে। ইশ! আমাদের বাবা-মায়েরও যদি বইটি পড়া থাকতো, তারাও যদি এমনভাবে আমাদের শেখাতেন, কতই না ভালো হতো!
লেখিকা একজন কনভার্টেড মুসলিমা হয়েও মুসলিম সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। মুসলিম পরিবারগুলো আজ পারভাঙ্গা নদীর মতো ভেঙে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মরণের খেয়াঘাটে। একটি ইসলামি পরিবার গঠনে ধর্মীয় জ্ঞান যে কতখানি অপরিহার্য, তা এই মূল্যবান বইয়ের পাঠকমাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন। বইটা সংকলন করতে গিয়ে লেখিকা অনেক গবেষণা ও পরিশ্রম করেছেন, যার স্পষ্ট ছাপ ফুটে ওঠে তার জ্ঞানগর্ভ লেখনিতে।
সর্বোপরি, এ বইটি শিশুদের জন্য নয়; বরং অভিভাবকদের জন্য। সদ্য বাবা-মা হওয়াদের জন্য হাইলি রেকমেন্ডেড।
✲ প্রোডাকশন, অনুবাদ ও অন্যান্য :
দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ ও চিত্তাকর্ষক শিরোনামে ফুটে উঠেছে বইয়ের মূল থিম। অর্থবহ প্রচ্ছদটি এঁকেছে সমকালীন গ্রাফিক্স টিম। ফ্ল্যাপের লেখাগুলোও খুব সুন্দর। যদিও প্রথম মুদ্রণের বই, তবুও আমি কোনো টাইপিং মিসটেক প্রত্যক্ষ করিনি। তবে বানানের বিষয়ে কিছুটা আপত্তির জায়গা রয়ে যায়। ভেতরের অঙ্গসজ্জা, লেখার ফন্ট সাইজ ও স্পেস যুৎসই ছিল। বইয়ের শেষে পাঠকের জন্য রাখা হয়েছে নোট পাতা। ১৭৬ টাকা মুদ্রিত মূল্যের গ্রন্থটি পেপারব্যাক আকারে পাওয়া যায়। তবে গুরুত্বের বিচারে হার্ডকভারে বাঁধাই করা থাকলে ভালো হতো।
অত্যন্ত যত্নের সহিত এমন মানসম্পন্ন লেখা উপহার দেওয়ার জন্য; অনুবাদক দ্বয়কে অজস্র ধন্যবাদ। সুখপাঠ্য শব্দের গাঁথুনিতে বর্ণনার গতি এবং ভাষার ভাব ও প্রাঞ্জলতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকখানি। এরকম সহজ, সাবলীল ও ঝরঝরে অনুবাদের বই খুব কমই চোখে পড়ে। সম্পাদনাও হয়েছে বেশ দারুণ। খাপছাড়া কিছু নয়, একদম ধারাবাহিক বর্ণনা। ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনীয় টিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। যারা অ্যাকাডেমিক ধাঁচের বইয়ে মনোযোগ রাখতে পারেন না, তারাও স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ে ফেলতে পারবেন।
বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তুলতে যতটা সংক্ষিপ্ত করা যায়, বইয়ের কলেবর ঠিক ততটাই। তবে কয়েক জায়গায় আরেকটু বিশদ বিবরণ থাকলে ভালো হতো। কিছু কিছু শব্দ ঘুরেফিরে বারবার এসেছে, বিকল্প শব্দ ব্যবহার করা যেত। যারা প্যারেন্টিং বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী তারা শাইখ আব্দুল করীম বাক্কার এর ‘আদর্শ পরিবার সিরিজ’ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘প্যারেন্টিং সন্তান প্রতিপালনে কলা-কৌশল’, ড. হাসসান শামসি পাশা রচিত ‘প্যারেন্টিং এর আধুনিক পাঠশালা’ এই বইগুলো পড়তে পারেন।
✲ সারকথা :
‘শিশুর মননে ঈমান’ বইটি আপনাকে কীভাবে মুসলিম হবেন তা শেখাবে না; বরং প্রকৃত মুমিন হয়ে ওঠার দীক্ষা দিবে। কথার ফুলঝুরিতে মোহিত না করে, কোমলমতি শিশুদের হৃদয়-কাননে ঈমান ও ইহসানের মুক্তো পুরে দেওয়ার কৌশল জানাবে। আমাদের সব ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য হলেই, ঐশী ছায়া ও ছোঁয়ায় ঈমানের আস্তিন আকাশ ছোঁবে।
আমরা ভবিষ্যতে বাচ্চাদের যেমন মানুষ হিসেবে দেখতে চাই; আমাদের নিজেদেরও উচিত ঠিক সেরকম হওয়া। সন্তানের প্রতি আজকে উন্মনা থাকা মানে, ভবিষ্যৎ ব্যর্থতার খাল কাটা। তাই নিজের ঈমান আগে ঝালাই করে নিতে চাইলে, পড়ে ফেলুন ‘শিশুর মননে ঈমান’ বইট.া

